ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, আপনারা (আওয়ামী লীগ) আমাদের বলেছিলেন, এক সঙ্গে আন্দোলন, একসঙ্গে নির্বাচন, একসঙ্গে সরকার। আমাদের কোনও দাবি ছিল না। আপনারাই বলেছিলেন, একসঙ্গে আন্দোলন করেছি, নির্বাচনও করেছি। কিন্তু যখন সরকার গঠনের প্রশ্ন এলো, আমরা হোঁচট খেলাম। তারপরও আমরা পিছিয়ে থাকিনি। সেই ঐক্যকে চোখের মনির মতো রক্ষা করেছি।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মেনন আরও বলেন, অত্যন্ত র্দুভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। ২০১৪ সালে যেসব সিট হাতুড়ি নিয়ে নির্বাচন করেছিলাম। ২০১৮ সালে ওই সিট আমাদের ভাগে এসেছিল। কিন্তু আমাদের বলা হলো, নৌকা নিয়ে নির্বাচন করুন। কিন্তু নির্বাচন করতে গিয়ে দেখলাম নৌকার মাঝিরাই নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে। যেখানে জাতীয় পার্টিকে জিতিয়েছে। সাম্প্রদায়িক বিভক্তি করেছে। এই নগ্ন খেলা আর যাইহোক জোটের রাজনীতি হতে পারে না।

তিনি বলেন, আপনারা (আওয়ামী লীগ) ভুলে গেছেন। আপনাদের পাশে যখন কেউ ছিলো না। তখন ছিল ১৪ দল আর ওয়ার্কার্স পাটি। আবারও সেই নির্বাচনের প্রশ্ন। এই রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে জনসভা করে গেছেন। ভোট চেয়েছেন। কার ভোট। নৌকায় ভোট চেয়েছেন। ঠিকই আছে। তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। তিনি নৌকায় ভোট চাইতেই পারেন। কিন্তু তিনি একই সঙ্গে ১৪ দলেরও নেত্রী। তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ১৪ দল একত্রে নির্বাচন করবেন। সভা করে তিনি এই কথা বলেছেন। কিন্তু ভোট চাইবার বেলায় ‘নৌকা’, ‘হাতুড়ির’ কোনও জায়গা নাই। ভোট চাইবার বেলায় ‘নৌকা’, মশালের কোনও জায়গা নাই। ভোট চাইবার বেলায় ‘নৌকা’, সেখানে কোরালের কোনও জায়গা নাই। তাহলে হলো!

ওয়ার্কার্স পার্টির দলীয় প্রধান আরও বলেন, এখনো আমরা মনে করি, ১৪ দল প্রাসঙ্গিক। আমাদের সামনে শত্রু বিভীষণ। কারণ বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্র করছে। সুতরাং আমাদের নতুন রাজনীতি, নতুনভাবে গড়তে হবে। এর কোনও বিকল্প সামনে নাই। নির্বাচন আসছে। নির্বাচন করবো। আমরা জামায়াত-হেফাজত মৌলবাদী শক্তিকে মোকাবিলা করেই অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশ উন্নয়নের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়ন তো হয়েছেই। কিন্তু বৈষম্যও বেড়েছে। বঙ্গবন্ধু বলতেন, আমরা এমন দেশ চাই না, যেখানে বৈষম্য থাকবে। কিন্তু আজ দেশের সিংহভাগ সম্পদ ৫ শতাংশ মানুষের হাতে। আজ গরিবের উন্নয়ন হয়নি। উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়ন হয়েছে ধনীক শ্রেণির। ১ নভেম্বর মাসেই ইসলামি ব্যাংক থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে ১টি প্রতিষ্ঠানই। আজ আমাদের মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেল হয়েছে। কিন্তু আমার দেশের টাকা দেশে আর থাকছে না।

মেনন আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ও জঙ্গিবাদকে আমরা পরাস্ত করেছি। সেনাশাসনের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছি। কিন্তু আজকে আবারও সেই পুরোনো প্রশ্ন। সেই প্রশ্ন, সেই শক্তি। যাদের পেছনে ফেলেছিলাম, পরাস্ত করেছিলাম নির্বাচনের মাধ্যমে। তারা আবারও রাজপথ দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। তাদের একটার পর একটা শর্ত। তাদের শর্তের কোনও শেষ নাই। তাদের এক নেতা জেলখানায়। আরেক নেতা লন্ডনে। লন্ডনে থেকে ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র তৈরি হচ্ছে। সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হবে না।

মেনন বলেন, ১৪ দলের মূল শরীক আওয়ামী লীগ, ১৪ দলকে কোনও কিছু না জিজ্ঞেস করে, না জানিয়ে যদি মনে করে থাকেন, এককভাবে এই শক্তির মোকাবিলা করবেন, তবে তারা ভুল করছেন, ভুল করবেন। কারণ তারা এই ফাঁদে ১৯৯৬ সালে, একই ষড়যন্ত্রের মুখে ২০০১ সালে পড়েছিল। আমরা তো ভুলে যায়নি। এই যে রাজনৈতিক বিজয় আমরা করেছিলাম। তা ছিল ঐক্যবদ্ধ শক্তি। ঐক্যের শক্তি। আমরা কি ভুলে গেছি, বিএনপি কি গ্রেনেড হামলা করেছিল, এই জোট কি ধরনের অত্যাচার করেছিল। সেদিন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি বলেছিল, বিএনপি-জামায়াত জোট আর না। আমাদের সেই ঘোষণায়, সেদিন ঐক্য গড়ে উঠেছিল।

বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি রাজশাহী বিভাগের আয়োজনে এই সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। এসময় তিনি এই রাজশাহী অঞ্চলে তার নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে হাতুড়ি মার্কাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।

দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি লিয়াকত আলী লিকুর সভাপতিত্বে বক্ত ছিলেন কেন্দ্রীয় পলিটনব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক এবং আমিনুল ইসলাম গোলাপ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন, দলের রাজশাহী মহানগর সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু ও জেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা।

শাহিনুল আশিক/এসএম