‘বর্তমানে কাজকর্ম নাই, হাতে টেহাও নাই। বাড়িত খাবার নাই। এই জন্য বাড়িত কিছু পুরাতন বাঁশ ছিল তা হাটে বেচার জন্য নিয়ে আসছোং। হয়তো ১৫০শ টাকা মত বেচা যাবার পায়। এ দিয়া বাজার করে নিয়ে যাইম।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন যাত্রাপুর ইউনিয়নের ভগপতিপুর গ্রামের ফটিক আলী (৬০)। 

যাত্রাপুর হাটে মাথায় করে জ্বালানির জন্য ব্যবহৃত বাঁশ-খড়ি বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ সময় ফটিক আলী বলেন, হামরা গরিব মানুষগুলা তো খুব সমস্যাত পরছি বাহে। বাজারে যে জিনিসপাতির দাম। তাতে কুলানো যাচ্ছে না। ৫৫-৬০ টাকা প্রতি কেজি চাল। কোনো কিছু সস্তা নাই। গরিব মানষের যত সমস্যা।

জানা যায়, ফটিক আলীর পরিবারে সাত সদস্য। তিনি পাঁচ ছেলে-মেয়ের বাবা। এর মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। এক ছেলেকেও বিয়ে দিয়েছেন। দিনমজুরের কাজ করে কোনোরকম সংসার চলে তার। বর্তমানে চরাঞ্চলে কাজ না থাকায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পরেছেন তিনি। এক ছেলে গত মাসে কাজের সন্ধানে চলে গেছেন ঢাকায়। তবে এতোদিনে একটি টাকাও দেননি বাবাকে। তাই খাবার জোগাড় করতে শনিবার কোনো উপায় না পেয়ে বাড়িতে রাখা কিছু পুরাতন বাঁশ আর খড়ি জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করতে যাত্রাপুর হাটে ছুটেছেন ফটিক আলী।

একইভাবে হাটে কাঠখড়ি বিক্রি করতে এসেছেন ওই ইউনিয়নের খেয়ার আলগা গ্রামের শেখ জামাল। তিনি বলেন, বয়স হয়ে গেছে। ঠিকমতো কাজ করতে পারি না। ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে বিভিন্ন সময় গাছ ভেসে আসে। এগুলো তুলে, শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে হাটে বিক্রি করি। আমার দুই ছেলে, তিন মেয়ে সবার বিয়ে হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র নদে কাঠ ধরে বিক্রি করে যা হয় তা দিয়ে সংসার চালাচ্ছি। যে চাল আগে ১৫শ টাকা বস্তুা কিনছি সে চাল এখন দ্বিগুণ দাম। এভাবেই চলছে আরকি। এতো জিনিসপত্রের দাম তাও আল্লাহ পাক চালাচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম সদরের ব্রহ্মপুত্র বিছিন্ন যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, চরের মানুষজন বিভিন্ন কারণে অনেক কষ্টে থাকে। এর মধ্যে বর্তমানে কোনো কাজকর্ম নাই এখানে। প্রতিবছর নদী ভাঙনের কারণে চরের দরিদ্র মানুষ জমিজমা হারিয়ে আরও দরিদ্র হচ্ছে। চরের অলা নামের একটি গাছ প্রচুর হয়। এ গাছগুলো কেটে বিক্রি করে সংসার চালান অনেকে। কেউ কেউ নদীতে ভেসে আসা গাছ ধরে শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে যাত্রাপুর হাটে বিক্রি করেন। চরে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে জীবনযাপন করেন।

জুয়েল রানা/আরকে