কুমিল্লার লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হুমকি দিয়েছেন ওই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হামিদ। 

উপজেলা পরিষদের নির্বাচনকে ঘিরে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে গত বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার ভুশ্চি এলাকায় দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমি হামিদ কত খারাপ, এটা টের পাইবা। আমি ২৭ তারিখ পর্যন্ত সময় দিছি দুইজনকে, যে আমার ছেলের সঙ্গে নির্বাচন করবা না। হয় বন্ধ করো, আর না হয় ২৮ তারিখ দেখা হবে রাস্তায়। আমার বয়স ৮০ বছর। আর কয় বছর বাঁইচছাম, আমার বাঁচার আর সাধ নাই।’ তার দেওয়া এই বক্তব্যের সোয়া এক মিনিটের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নৌকা প্রার্থী মোহাম্মদ কামরুল হাসানের বাবা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বড় ভাই।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কামরুল হাসান কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি। আগামী ১৬ মার্চ লালমাই উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেবেন তিনি। সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে শোনা যায়, তিনি ছেলের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হওয়া ব্যক্তিদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য হুমকি দিচ্ছেন। 

আবদুল হামিদকে ওই ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘এখন যারা দাঁড়াইছে আমার ছেলের সঙ্গে, কথা বোঝেন, ওনারা অনেক দায়িত্বে ছিলেন। লোটাস কামাল (অর্থমন্ত্রী) তাদের অনেক কিছু দিয়েছেন। এক হারুনকে (মো. হারুন অর রশিদ মজুমদার) ছাড়া। হারুনকে কিছু দিছে কিনা, আমি জানি না। এটা কামাল জানে, আর হারুন জানে। কিন্তু মমিনকে (আবদুল মমিন মজুমদার) অনেক কিছু, অনেক কিছু দেওয়া হয়েছে। সে যা পাইছে, লালমাই উপজেলার মানুষ তা পায়নি। লালমাই কলেজে প্রিন্সিপাল করে দিছিল, কালাম মজুমদারে (সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম মজুমদার) চাকরি দিছে, লোটাস কামালে প্রিন্সিপাল বানাইছে। এই যে প্রিন্সিপাল অইল, ভুশ্চির কোনো ছেলেমেয়েকে সে বিনা বেতনে ফরম ফিলআপ করাইছে? দেখাইতে বলেন, পুরা লালমাই উপজেলাতে একটা ছেলে অথবা একটা মেয়েকে বিনামূল্যে ফরম ফিলআপ করাইছে বা ২০০ টাকা কমাই দিছে এমন নজির আছে কিনা।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আবদুল হামিদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তার ছেলে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আত্মগোপনে আছেন। তাদের নির্বাচনী মাঠে না দেখে আব্বা দলীয় নেতা হিসেবে হয়তো এই বক্তব্য দিয়েছেন।

বর্তমানে কামরুল হাসান ছাড়া চেয়ারম্যান পদে ভোটে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল মমিন মজুমদার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বিদ্রোহী প্রার্থী মো. হারুন অর রশিদ মজুমদার। এই দুই প্রার্থীর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাদেরও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে কথাটি শুনেছি। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। এ ধরনের বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের সামিল। দায়িত্বশীল পদে থেকে কেউ এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। 

আরিফ আজগর/আরকে