রংপুরের দমদমা ব্রিজের নিচে ঘাঘট নদ থেকে একটি গ্রেনেড বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধার হয়েছে। তবে এটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বয়স্ক ব্যক্তিরা। তাদের দাবি এটি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের হতে পারে।

গত শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) নগরীর দমদমা ব্রিজের নিচ থেকে গ্রেনেড বোমাসদৃশ বস্তুটি উদ্ধার হলেও আজ রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর ওই বোমাসদৃশ বস্তুটি সেখানকার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রাখা হয়।

ঘাঘট নদ সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী তালুক তামপাট মগলেরবাগ এলাকার ভাতের হোটেল ব্যবসায়ী তহমিনা বেগম (৮৫) গ্রেনেড বোমাসদৃশ্য এই বস্তুটি ঘাঘট নদে পেয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

তহমিনা বেগম বলেন, শুক্রবার দুপুরে গোসল করতে ঘাঘট নদে নামলে পায়ের নিচে কিছু একটা অনুভব হয়। এরপর তুলে লোহার বস্তু মনে করে সেটি ভালো করে পরিষ্কার করি। পরে বাজারের একটি দোকানে পরিমাপ যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য নিয়ে যাই। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আমার হাতে থাকা বস্তুটি গরম হতে থাকলে আশপাশের লোকজন বলছিল এটি গ্রেনেড।

তিনি আরও বলেন, আমি আনসারের ট্রেনিংয়ের সময়ে এমন গ্রেনেড বোমা দেখেছিলাম, তাই এটিকে পরবর্তীতে পানিতে রেখে দিই। এরপর ৯৯৯-এ কল করে বিষয়টি অবগত করলে পুলিশ এসে সেদিন থেকে পাহারা দিচ্ছে।

বৃদ্ধার মেয়ে শিউলি বেগম বলেন, আমরা তো জানি না এটা কী জিনিস? যখন মানুষ বলল যে এটা বোমা, তখন আমরা সরকারি নম্বরে কল করে ঘটনাটা জানিয়েছি। পুলিশ এসেছে কিন্তু এখনো এটা না নিয়ে যাওয়ায় আমরা শঙ্কিত। শুনেছি এই বোমা বিস্ফোরণ হলে নাকি অনেক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

নব্বই বছর বয়সী স্থানীয় কৃষক মহুবার রহমান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় হামার এই জাগাত অনেক গোলাগুলি হইছে। মেলা মানুষও মরচে। খানসেনারা খুব অত্যাচার চালাইছে। হয়ত এই গ্রেনেড বোমটা সেই সময়ের। এই ব্রিজের পাশোতে দমদমা বধ‌্যভূমিও আছে। ইয়ার আগোত তো একবার হামার এই দমদমা ব্রিজের নীচ থাকি পুলিশ বোম উদ্ধার করছে।’

গ্রেনেড সাদৃশ্য বস্তু দেখতে আসা ধর্মদাস বারো আউলিয়ার বাসিন্দা তসলিম উদ্দিন বলেন, এখানে তো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা বৃষ্টির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে। দমদমা ব্রিজটাও ভেঙে দিয়েছিল। আজ লোহার মতো যে বস্তুটা দেখছি এটা যুদ্ধের সময়ের গ্রেনেড হতে পারে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমরা বস্তুটি দেখেছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে বর্ণনা শুনে বোমাসদৃশ্য বস্তু সন্দেহ করছি। তবে আমরা নিজেরাও এখনো নিশ্চিত নই। আমরা সেনাবাহিনীর বোমা ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দিয়েছি, তারা এলে বিষয়টি হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ