বরগুনায় রেজিস্ট্রেশন-লাইসেন্সপ্রাপ্ত যানবাহন ও চালকদের তথ্য দিচ্ছে না বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। এছাড়াও সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। অনেক সময় টাকা দিয়েও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না তারা। জেলা বিআরটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সময় মতো অফিস করেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। সময় মতো অফিসও খোলা হয় না। 

গত রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অফিস টাইম সকাল ৯টা পেরিয়ে গেলেও খোলেনি বরগুনা বিআরটিএ অফিসের তালা। সকাল সাড়ে ৯টায় অফিস খোলা হয়, তবে অফিসে আসেননি সহকারী পরিচালক। একই কর্মকর্তা দুই জেলায় (বরগুনা ও পটুয়াখালী) দায়িত্বে থাকায় নিয়মিত অফিস করতে পারেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।  

বরগুনা জেলা বিআরটিএ কার্যালয়ের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করতে ওই দিন সকাল থেকেই অফিস চত্বরে ছিলেন ঢাকা পোস্টের এই প্রতিনিধি। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বরগুনা বিআরটিএ অফিসে সেবা নিতে আসা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথাও হয় তার। এখানকার সেবার মান, অনিয়ম ও ভোগান্তি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য জানান সেবা নিতে আসা লোকজন। 

সদরের পিটিআই সড়ক এলাকার রুহুল আমিন (৩৪) বলেন, আমি মাদরাসায় শিক্ষকতা করি। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তা রিনিউ করতে এসেছি। আগের থেকে কম সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি।

তালতলীর নাজমুল (২২) নামে একজন বলেন, আমি তিন মাস আগে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করি। আজ ফিঙ্গার দিতে এসেছি। এসে শুনি লাইসেন্স করাতে মোট সাড়ে ৬ হাজার টাকা লাগে। তবে আমার কাছে ১২ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। কারা নিয়েছে তাদের নাম বলা যাবে না। 

সেবা নিতে আসা মঠবাড়িয়ার গুলিশাখালী এলাকার নাজমুল ইসলাম (২৬) বলেন, আমার বাইকটি বরগুনা থেকে সেকেন্ড হ্যান্ড কিনেছি। রেজিস্ট্রেশনে নাম পরিবর্তনের মেয়াদ শেষ, তাই নাম পরিবর্তনের মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে ও ট্যাক্স টোকেনের জন্য এসেছিলাম। কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই কাজ শেষ।

সদর উপজেলার বাবুগঞ্জ এলাকার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি একটি ব্যাংকে চাকরি করি। আজ ছুটি নিয়ে স্মার্ট কার্ড নিতে এসেছিলাম। তবে যিনি কার্ড দেবেন তিনি এখনো আসেনি। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি। 

আমতলীর শাহিন নামে একজন বলেন, আমি পেশাদার লাইসেন্স করাব। যেখানে সরকারি ফি ৭ হাজার টাকা, সেখানে আমার সঙ্গে কন্ট্রাক্ট হয়েছে ১২ হাজারে। তবুও কিছু করার নেই, টাকা না দিলে কাজ হবে না। 

কার সঙ্গে কন্ট্রাক্ট হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আপনি খুঁজে বের করেন। দয়া করে আমারে ফাঁসাইয়েন না। 

মিনহাজ মিয়া (২০) নামে পরিরখাল এলাকার একজন বলেন, আমি বাস চালানোর জন্য লাইসেন্স করাতে আসছি। সব কাজ নিজেই করেছি। এখানে আগের মতো দালাল দেখা যায় না। লাইসেন্সের জন্য ৯ হাজার টাকা দিতে হবে।

লাকুরতলা এলাকার স্বপন মিয়া (২২) নামে এক যুবক বলেন, ব্যাংক ড্রাফট দুই বার করেছি, তবুও লাইসেন্স করাতে পারছি না। অফিস থেকে বলছে- আমার নাকি বয়স হয়নি। 

বড় গৌরিচন্না এলাকার বেলাল হোসেন (২৫) বলেন, ২০১৮ সালে লাইসেন্স করতে দেই, লাইসেন্স হাতে পাই ২০২২ সালে। হাতে পেয়ে দেখি ১ বছর আগেই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে লাইসেন্সের। পরে বিআারটিএ অফিসে যোগাযোগ করলে তারা তিন মাসের লার্নার দেয়। দীর্ঘ সময় পর আজ ফিঙ্গার দিতে আসার পর অফিস থেকে জানায় আমার ফাইল হারিয়ে গেছে, তারা খুঁজছে। আমার ভোগান্তির কোনো শেষ নেই।

মো. সুমন নামে লাকুরতলার একজন বলেন, নতুন বাইক কিনেছি। রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স করাতে দিয়েছি। কোনো ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। এখানে যারা কাজ করছেন, তাদেরকে কিছুটা বখশিশ দিয়েছি। এছাড়া আর কোথাও কোনো টাকা-পয়সা দেইনি।

মনসাতলীর সাগর (২২) নামে একজন বলেন, আমি বাইক কিনেছি সেকেন্ড হ্যান্ড। রেজিস্ট্রেশনের নাম পরিবর্তন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করাতে হবে আমার। কি কি লাগবে সেসব তথ্য নিতে এসেছিলাম।  সকাল সোয়া ৯টায় এসেও দেখি অফিস তালা দেওয়া। পরে কাজ শেষ করে দুপুরে আবার এসেছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূর্বে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল বরগুনা বিআরটিএ অফিস। এরপর ২০১৯ সালের শেষে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচ তলায় কার্যক্রম চালু করে বরগুনা বিআরটিএ অফিস। এদিকে জেলার যানবাহন, রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্সের তথ্য দেয়নি সংশ্লিষ্টরা। 

সকাল থেকেই বিআরটিএ বরগুনার সহকারী পরিচালকের কক্ষটি ছিল বন্ধ। পরে এখানকার সিল মেকানিক দোলন ও উজ্জ্বলের কাছে তথ্য চাইলে তারা বলেন, জেলার সব যানবাহনের তালিকা আমাদের কাছে নেই। রেজিস্ট্রেশন করা যানবাহনের তালিকা ও লাইসেন্সপ্রাপ্তদের তালিকা দিতে পারব। তাও ২০১৯ সাল থেকে। আপনি এক ঘণ্টা পর আসুন। 

এক ঘণ্টা পর গিয়ে দোলনকে আর পাওয়া যায়নি। তার সহকর্মী উজ্জল খান বলেন, দোলন খেতে গিয়েছেন। আর আপনার তথ্যর বিষয়টি স্যারকে জানিয়েছি। তিনি তথ্য অধিকার ফরমে আবেদন করতে বলেছেন। 

এসব বিষয়ে কথা বলতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বরগুনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল জলিলকে অফিসে পাওয়া যায়নি। তার ফোন নম্বরে কল করা হলে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তিনি বলেন, আমি গাড়িতে আছি। একটু পর আপনাকে কল দিচ্ছি। এরপর কয়েক দফায় তাকে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

আরএআর