ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ ও ডা. নুরুল হক ফকির

খুলনায় এবার শ্লীলতাহানি ও শিশুর অঙ্গহানির অভিযোগে দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী নুসরাত আরা ময়না। এতে  ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ ও হক নার্সিং হোমের মালিক ডা. নুরুল হক ফকিরকে আসামি করা হয়েছে।  

এর আগে হামলার অভিযোগে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে  নুসরাত আরা ময়নার স্বামী পুলিশের এএসআই নাইম শেখের বিরুদ্ধে একই থানায় মামলা করেন।  

মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী নুসরাত আরা ময়না উল্লেখ করেন, আমার স্বামী একজন সরকারি চাকরিজীবী। বর্তমানে তার কর্মস্থল সাতক্ষীরা। চাকরির সুবাদে তিনি সেখানেই অবস্থান করেন। আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ডা. নিশাত আব্দুল্লাহকে দেখালে তিনি মেয়ের হাতের আঙুলের অপারেশন করানোর কথা বলেন। তিনি আবু নাসের হাসপাতালে অপারেশন না করিয়ে তার পরিচিত ময়লাপোতা হক নার্সিং হোম থেকে অপারেশন করালে ভালো হবে বলে জানান। কারণ তিনি হক নার্সিং হোমে রোগী দেখেন ও অপারেশন করেন। 

তার কথা অনুযায়ী গত ১৭ জানুয়ারি দুপুর দেড়টার দিকে আমার মেয়েকে অপারেশন করানোর জন্য সোনাডাঙ্গা মডেল থানাধীন শেখপাড়ার হক নার্সিং হোমে ভর্তি করি। ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ডা. নিশাত আমার মেয়ের হাতের আঙুল অপারেশন করেন। অপারেশন করার পর থেকে দিন দিন আমার মেয়ের হাতের আঙুল কালো হতে থাকে। এ বিষয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললে তিনি আমার মেয়ের আঙুলের ছবি হোয়াটসঅ্যাপে দিতে বলেন। আমি তার কথা অনুযায়ী সরল বিশ্বাসে আমার ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেয়ের আঙুলের ছবি পাঠাই। পরবর্তীতে সে আমার মেয়ের চিকিৎসার সুযোগ নিয়ে আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য আমার ব্যবহৃত মোবাইলে নম্বরে বিভিন্ন সময় তার ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে কল করে। আমার মোবাইল নম্বরে তার ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ৩২ মিনিটে ‘ঘুম?’ রাত ১২টা ৩৪ মিনিটে ‘রাগ?’ রাত ১২টা ৩৮ মিনিটে ‘কথা বলা যাবে?’সহ বিভিন্ন সময় আপত্তিকর বার্তা প্রেরণ করেন।

এছাড়া বিভিন্ন সময় ফোন করে আমাকে একা দেখা করতে বলেন। আমার মেয়ের সুচিকিৎসার কথা চিন্তা করে চিকিৎসকের মোবাইলের কল ও ম্যাসেজের বিষয়ে কাউকে কিছু জানাইনি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ৬ ফেব্রুয়ারি আমার মেয়েকে নিয়ে শেখপাড়া হক নার্সিং হোমের চেম্বারে ড্রেসিং করানোর জন্য যেতে বলেন। সন্ধ্যায় সেখানে গেলেও আমাকে প্রায় দেড় ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। রাত সাড়ে ৮টায় আমার মেয়েকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে গেলে নিশাত আবদুল্লাহ আমাকে বিভিন্ন প্রকার আপত্তিকর কথাবার্তা বলার একপর্যায়ে আমার হাত ধরে টেনে তার কাছে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তার কু-মতলব বুঝতে পেরে মেয়েকে নিয়ে আমি অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে আসি। বিষয়টি ক্লিনিক মালিককে জানালে তিনি ডা. নিশাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আমাকে কাউকে কিছু না বলার জন্য শাসান।

এজাহারে বলা হয়, আমি কাউকে কিছু না বলে মনে কষ্ট নিয়ে মেয়ের সুচিকিৎসার কথা ভেবে চুপ থাকি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আবু নাসের হাসপাতালে ওই ডাক্তারের কাছে গেলে তার নির্দেশে হাসপাতালে থাকা ফিজিও থেরাপিস্ট লিপি নামে একজন আমার মেয়ের হাতের আঙুল ড্রেসিং করে দেন। পরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমার মেয়ের হাতের আঙুল ব্যান্ডেজসহ খুলে পড়ে গেলে ডাক্তার নিশাতকে ফোনে জানাই ও হক নাসিং হোমে যাই। সেখানে আমার মেয়ের চিকিৎসা করতে অনীহা প্রকাশ করেন ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বলেন। তখন আমি ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানালে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে আমার মেয়ে আঙুল ব্যান্ডেজ করে দেন। আমার ওপর অসৎ উদ্দেশ্যে চরিতার্থ করতে না পেরে অন্য আসামিদের পরস্পর যোগসাজসে আমার মেয়ে অথৈয়ের (৬) বাম হাতের আঙুলে গুরুতর আঘাত দিয়ে আঙুল স্থায়ীভাবে বিকলাঙ্গ করে অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন।  

অপরদিকে মঙ্গলবার ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরীরর শেখ পাড়ার হক নার্সিং হোমে একজন রোগীর সার্জারি কাজে ব্যস্ত ছিলাম। জটিল অপারেশন বিধায় দীর্ঘ সময় অপারেশন চলছিল।  রাত ১০টায় সাতক্ষীরা পুলিশ বিভাগে কর্মরত এএসআই নাঈম ও তার স্ত্রী ৪/৫ জন লোক নিয়ে আমার অপারেশন থিয়েটারের দরজায় লাথি মারা শুরু করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকেন। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেন- আমার মেয়ে অথৈকে এক মাস আগে আঙুল অপারেশন করেছিলি, আমার মেয়ের আঙুল ভালো হয়নি। এর জন্য তুই দায়ী। এখনই ১০ লাখ টাকা আমার মেয়ের ক্ষতিপূরণ দিবি। এরপর এএসআই নাঈম আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কিল ঘুষি লাথি মারতে থাকেন। এই সময় তার স্ত্রী ও সঙ্গীরা আমাকে ঘিরে রাখেন। একপর্যায়ে এএসআই নাঈম গলা টিপে ধরে আমার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করতে থাকেন। এ সময় তার স্ত্রী আমার দুহাত চেপে ধরেন এবং অন্য অজ্ঞাতনামারা আমাকে মারপিট করতে থাকেন, তারা ক্লিনিকের ওটিতে ভাঙচুরও চালান। একপর্যায়ে আমার সঙ্গে থাকা নার্সসহ অন্যান্য সহযোগীরা এবং ক্লিনিকের মালিক ডা. নুরুল হক ফকির দৌড়ে এসে আমাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করেন। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছি।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমতাজুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, উভয়পক্ষ থানায় মামলা করেছে। বুধবার ভুক্তভোগী ওই নারী বাদী হয়ে শ্লীলতাহানি ও শিশুর অঙ্গহানির অভিযোগ তুলে মামলা করেন। এর আগে মঙ্গলবার ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। দুটি মামলার তদন্ত চলছে।  

মোহাম্মদ মিলন/আরএআর