চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী রেখে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটাকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকের মাঝে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। বুধবার (১ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে। 

জানা যায়, পারিবারিক কলহের জের ধরে জেলা শহরের দরগাপাড়া মহল্লার নাজমুল হুদার স্ত্রী শামসুন্নাহার বেগম (৫০) প্রায় ১০টি প্রেসারের ওষুধ খেয়ে ফেলেন। এই অবস্থায় তাকে জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন। এসময় জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা ৪২তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসারের কক্ষে কেক কাটছিলেন। 

আহত রোগীর স্বজনরা চিকিৎসককে ডাকতে গেলে তারা আসতে দেরি করায় বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে রোগীর স্বজন এবং চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। এসময় সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে রোগীর স্বজনদের হেনস্তা ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে। বর্তমানে ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন শামসুন্নাহার বেগম। 

তার স্বামী নাজমুল হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্ত্রী পারিবারিক কলহের জের ধরে ১০টি প্রেসারের ওষুধ খেয়ে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসি। এসে দেখি ডাক্তারের রুমে কয়েকজন ডাক্তার মিলে কেট কাটছেন। চিকিৎসার জন্য তাদেরকে ডাকলেও সাড়া না পেয়ে দরজায় জোরে ধাক্কা দিলে ডা. মোশফিকুর বের হয়ে এসে রাগারাগি করেন। এসময় ডাক্তার বলেন, কি হয়েছে? আপনাদের কোনো চিকিৎসা দেওয়া হবে না। রোগী দেখা হবে না। এসময় ফোন বের করে ভিডিও করতে গেলে স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশ দেন আমাকে ঘরে আটকে রাখতে। এমনকি পুলিশ এনে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান তিনি।

শামসুন্নাহার বেগমের ছেলে শামসুল হুদা (২৪) ঢাকা পোস্টকে বলেন, জরুরি বিভাগে রোগী রেখে তারা ভেতরে কেট কাটা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ডাক্তারকে ডাকতে গেলে সেখানে থাকা এক স্বাস্থ্যকর্মী জানায়, আধা ঘণ্টা বিরতি, এই সময়ের মধ্যে ডাক্তার রোগী দেখবে না। তবুও ডাকতে গেলে ডাক্তার বের হয়ে আমাদের সঙ্গে বাজে আচরণ করে এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা আমাদের ঘরের মধ্যে আটকে রাখার চেষ্টা করে। আমাদের পরিবারের সদস্যদেরকেও নানাভাবে হয়রানি করা হয়। পরে অন্যান্য চিকিৎসকদের সহযোগিতায় মায়ের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

অভিযোগ অস্বীকার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক মো. মোশফিকুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোগী না দেখা ও স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার বিষয়টি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। রোগী আসা মাত্রই সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

কেক কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি আনুষ্ঠানিক তেমন কিছু নয়। ৪২তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারদের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসারের কক্ষে কেক কাটা হয়। যা এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে কিছু করা হয়নি।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাসুদ পারভেজ জানান, কেক কাটার ঘটনার সময় সেবা নিতে আসা ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়। এটি তেমন কিছু নয়। পরে উভয়পক্ষকে ডেকে ভুল বোঝাবুঝির অবসান করা হয়েছে। এছাড়া রোগীকে সঠিকভাবে চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

জাহাঙ্গীর আলম/আরকে