২৫ একর জমিতে আগাম তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক জয়নাল আবেদীন (৫০)। দীর্ঘদিন ধরে তরমুজ চাষাবাদে যুক্ত থাকলেও এবার আগাম তরমুজে ফলন বিপর্যয় হওয়ায় হতাশ তিনি। এখন তিনি দ্বিতীয় পর্যায়ে ফলন ভালো হওয়ার আশা করছেন।  

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ইউনিয়নের পতিত জমি বর্গা নিয়ে ৫ বছর ধরে তরমুজ আবাদ করেন সুবর্ণচর উপজেলার চর আমান উল্লাহ ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক জয়নাল আবেদীন।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে তরমুজ আবাদে জড়িত। কখনো এত লোকসানে পড়ি নাই। আমার গাছগুলো খুব ভালো হয়েছে কিন্তু ফলন খারাপ হয়েছে। কেন ফলন খারাপ হলো তা আমার জানা নেই। তবে আল্লাহ যদি সহায় হয় তাহলে দ্বিতীয় পর্যায়ে ফলন ভালো হলে কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। 

জয়নাল আবেদীন আরও বলেন, চট্টগ্রাম, ফেনীসহ বেশ কিছু জেলায় আমার তরমুজ যায়। ২৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। একর প্রতি খরচ হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু কিছু কিছু জমিতে একদম ফল নাই। 

কৃষক মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের তরমুজের অবস্থা ভালো না। আবহাওয়া খারাপ নাকি ওষুধ খারাপ আমরা বুঝতেছি না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সকল ওষুধ দেওয়া হয়েছে। গাছ হৃষ্টপুষ্ট কিন্তু ফলন নাই।

মুছাপুর ইউনিয়নে ১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন আলমগীর হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৮ লাখ টাকা খরচ করে ১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। আশানুরূপ ফলন হয়নি। 

মুছাপুরের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এখানে তরমুজ চাষ খুব ভালো হয়। আগামীতে ভালো আবাদ হবে বলে আমি আশাবাদী। লাভ-লোকসান মিলেই ব্যবসা। যদি কোনো কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েন তাহলে অনুরোধ করব কৃষি অফিস যেন তাদের পাশে থাকে। আমিও চেয়ারম্যান হিসেবে পাশে থাকব। 

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোম্পানীগঞ্জে তরমুজ চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ্যমাত্রার বেশি আবাদ করতে সক্ষম হয়েছি। এ বছর কোম্পানীগঞ্জে ২ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯০০ হেক্টর। তবে কেউ কেউ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আমি মনে করি আগাম চাষে ঝুঁকি ও লাভের সম্ভাবনা দুটোই থাকে। সুবর্ণচরের কৃষকের মাধ্যমে কোম্পানীগঞ্জে তরমুজ আবাদ শুরু হয়। ফলে দিন দিন আবাদের পরিমাণ বাড়ছে। নিয়মিত চাষিদের আমরা প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে সামনে রমজান আসছে তাই তরমুজে লোকসান হবে না বলে মনে করি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নোয়াখালীর উপ-পরিচালক মো. শহীদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর নোয়াখালীতে প্রায় ৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করা হয়েছে। আগাম তরমুজ এখন বাজারজাতকরণের অপেক্ষায়। আমি নিজেই তরমুজ খেত ঘুরে দেখেছি। কিন্তু কোথাও আবাদ খারাপ হয়েছে বলে মনে হয়নি। 

হাসিব আল আমিন/আরকে