হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের ডা. নিশাত আব্দুল্লাহর করা মামলায় পুলিশের এএসআই নাঈমকে ক্লোজড করা হয়েছে। তাকে সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়।

চিকিৎসকদের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সকালে তাকে প্রত্যাহারের বিষয়টি জানার পর সাড়ে ৯টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের টিকিট দেওয়া হয়। পরে ১০টার দিকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। খুলনার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) অফিসে কর্মবিরতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে জরুরি সভায় বসেছে চিকিৎসকরা। 

গতকাল বুধবার (১ মার্চ) ভোর ৬টা থেকে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি শুরু হয়। টানা দুই দিনের কর্মবিরতিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে রোগীরা।  

খুমেক হাসপাতালে টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা রিনা বেগম জানান, সাড়ে ৯টার দিকে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল টিকিট দেওয়ার জন্য। আমরা চল্লিশটির মতো টিকিট দিয়েছি রোগীদের। এরপর আমাদের টিকিট দেওয়া বন্ধ করতে বলা হয়। কর্মবিরতির বিষয়ে সভা শেষে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আর যারা টিকিট সংগ্রহ করেছে, তাদেরকে জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখানোর জন্য পাঠানো হয়েছে।

বরগুনার বামনা থেকে অসুস্থ বাবা আশরাফ আলীকে (৮০) নিয়ে এসেছেন মো. ফারুখ হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আমার আব্বাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য নিয়ে আসছি। এর আগে এই হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর পর তিনি সুস্থ হয়েছিলেন। গতকাল আমরা হাসপাতালে এসেছিলাম। আসার পর শুনি গণ্ডগোলের কারণে রোগী দেখছেন না ডাক্তাররা। বাড়ি যাওয়ার সময় গেটে ব্যানারে দেখেছিলাম আজকে খুলবে। সেই জন্য আজকে আবার এসেছি। এখন আবার ফিরে যেতে হচ্ছে।

মোংলার দিগরাজ থেকে আসা মনিরা বেগম বলেন, বোনকে নিয়ে এসেছি ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু এসে শুনি ডাক্তার আজও রোগী দেখবে না। এখন আবার ফিরে যেতে হবে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, পুলিশের এএসআই নাইমকে ক্লোজড করা হয়েছে। ফলে বিএমএ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী হাসপাতালে আসা রোগীদের টিকিট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। পরবর্তী সিদ্ধান্ত মিটিং শেষে জানা যাবে।

সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, এএসআই নাঈম শেখকে জেলা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। 

বিএমএ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে আমাদের বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল। সেই সমাবেশ স্থগিত করে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে। এখন বিএমএ অফিসে জরুরি সভা চলছে। সভা শেষে কর্মবিরতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানা যাবে।

এর আগে বিএমএ সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর শেখপাড়া এলাকার হক নার্সিং হোমের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নাঈম (সাতক্ষীরা সদরে কর্মরত) ও তার সঙ্গীরা ডা. শেখ নিশাত আবদুল্লাহকে মারধর করেন। এছাড়া অপারেশন থিয়েটারে ভাঙচুর চালান তারা। তার মেয়ের এক মাস আগে করা অপারেশনের জটিলতার কথা বলে তারা এই হামলা চালায়। এ ঘটনায় ডা. নিশাত বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন।
 
ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত নাঈমের স্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই নারী হয়রানির শিকার হওয়া মাত্র আইনের আশ্রয় নিতে পারত। কিন্তু সে তা নেয়নি। আসামি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বিএমএতে এসে মাফ চেয়েছে। তখন তারা এই সব কথা বলেনি। এখন হঠাৎ করে এসব কথা বলার অর্থ হচ্ছে বিএমএর আন্দোলনকে বিতর্কিত করা। আমরা অপারেশন করার সময়ে একজন অধ্যাপককে মারপিটের ঘটনার বিষয়টির প্রতিবাদ ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি করছি। এই ঘটনার সঙ্গে ওই নারীর মামলার কোনো সম্পর্ক নেই।

এদিকে হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার ডা. নিশাত বাদী হয়ে এএসআই নাঈমের বিরুদ্ধে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। অপরদিকে শ্লীলতাহানি ও শিশুর অঙ্গহানি করার অভিযোগ তুলে ডা. নিশাতসহ ২ জনের বিরুদ্ধে একই থানায় মামলা করেন পুলিশের এএসআই শেখ নাঈমের স্ত্রী নুসরাত আরা ময়না। 

মোহাম্মদ মিলন/আরকে