হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা মমিনুর রহমান সজীবের দখলে থাকা খাস জমি উদ্ধার করে জেলা প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে জায়গাটি ভোগ-দখল করছিলেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সজীব ও তার লোকজন। 

গত বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রশাসনের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত সজীব ও তার লোকজনকে উচ্ছেদের পাশাপাশি আজমিরীগঞ্জ শহরের শানবাড়ি মৌজার .৭৪ একর সরকারি ভূমি উদ্ধার করেন। একইসঙ্গে উদ্ধারকৃত ভূমিতে খাস খতিয়ানভুক্ত সরকারি ভূমি হিসেবে চিহ্নিতকরণের জন্য একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়।

কিন্তু মমিনুর রহমান সজীব ২৪ ঘণ্টাও পার হতে দেননি। পরদিন বৃহস্পতিবার সেই ভূমি আবারও দখলে এনে নিজের নামে সাইনবোর্ড টানান। তার দখলে যাবার পর থেকেই জেলা প্রশাসনের টানানো সরকারি ভূমির সাইনবোর্ডটি গায়েব হয়ে গেছে। 

‘আদালতের আদেশ আমার পক্ষে। প্রশাসন আদালতের নির্দেশ অমান্য করে আমার লিজকৃত ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে। অভিযানের সময় আমি সেখানে ছিলাম না। যদি থাকতাম তাহলে উচ্ছেদ করতে পারত না। তাই আমি পরদিনই আমার জায়গা দখলে নিয়েছি এবং আমার নামে সাইনবোর্ড টানিয়েছি। প্রশাসনের সাইনবোর্ড কারা সরিয়েছে, তা আমি জানি না।
 
সাইনবোর্ড ও দখল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে এসব উত্তর দেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা মমিনুর রহমান সজীব।

এনিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান সজীব বলেন, ওই ভূমির মালিক জেলা পরিষদ। তিনি সরকারি নীতি মেনে ২০১৫ সালে একটি অংশ লিজ নিয়ে খাজনা পরিশোধ করেই ভোগ-দখল করছেন। 

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শানবাড়ি মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের ৫৪৮ দাগের ০.৭৪ একর ভূমি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভোগ-দখল করছিলেন মমিনুর রহমান সজীব। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সিনিয়র সহকারী কমিশনার (রাজস্ব শাখা) ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুজ্জামানের ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই ভূমি সজিবের কাছ থেকে দখলমুক্ত করেন। তারপর সেখানে ‘১নং খাস খতিয়ানভুক্ত সরকারি ভূমি’ লেখা একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়।
 
প্রশাসনের অভিযান সম্পর্কে মমিনুল ইসলাম সজীবের অভিযোগ হলো, ৬ মাস আগে আজমিরীগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিজের জায়গায় ফসলাদি আবাদ করতে বাঁধা দিয়ে বলেন, এই জমির মালিক জেলা প্রশাসন। এরপর থেকে আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ ও আকারে-ইঙ্গিতে অনৈতিক সুবিধা দাবি করেন।
 
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, ওই ভূমিটি এসএ ও আরএস রেকর্ডে ১নং খাস খতিয়ানের। যার মালিক জেলা প্রশাসক মানে সরকার। মমিনুর রহমান সজীব সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে দখলে ছিলেন। প্রশাসনের টানানো সরকারি ভূমি চিহ্নিতকরণের সাইনবোর্ড যারা অপসারণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনৈতিক সুবিধা প্রসঙ্গে এসি ল্যান্ড শফিকুল ইসলাম বলেন, কেউ যদি এভাবে ডাহা মিথ্যা বলেন, তাহলে কিছুই করার নেই। 

সদ্য যোগ দেয়া আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল ভৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। 

অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার (রাজস্ব) মো. কামরুজ্জামান জানান, সজিব যদি লিজসূত্রে মালিক হন, তাহলে অবশ্যই কাগজপত্র রয়েছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করব। আর সরকারি সাইনবোর্ড অপসারণ করার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।

হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম বলেন, ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত মানে হচ্ছে, ওই ভূমির মালিক জেলা প্রশাসক। তবে কিছু ভূমি নিয়ে এখনো জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। আজমিরীগঞ্জের ওই ভূমি নিয়ে আমার জানা নেই। তবে আগামী সপ্তাহে যোগাযোগ করলে বিস্তারিত বলতে পারবো।

এমএএস