নারায়ণগঞ্জে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নির্বাচনের প্রচারণায় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সামনেই নারায়ণগঞ্জ স্বাচিপের সাধারণ সম্পাদক ডা. বিধান পোদ্দারের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছেন ডা. আতিকুজ্জামান সোহেল ও তার অনুসারীরা। এ ঘটনায় চিকিৎসকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সন্ধ্যায় এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ডা. বিধান পোদ্দার নারায়ণগঞ্জ মডেল থানায় মোট ৮ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। এর আগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নির্বাচনের প্রচারে প্রার্থীরা নারায়ণগঞ্জের গণগ্রন্থাগারে অবস্থানের সময় হামলার শিকার হন স্বাচিপের নারায়ণগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. বিধান পোদ্দার।

প্রত্যক্ষ্যদর্শী সঙ্গে কথা বলে ও ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নির্বাচনের প্রচারণার উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ চিকিৎসকদের কাছে প্রচারণার জন্য স্বাচিপের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলনসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় চিকিৎসক নেতা ও সাধারণ চিকিৎসকসহ সিনেটের ভোটাররা নারায়ণগঞ্জ গণগ্রন্থাগারের সামনের উদ্যানে সমবেত হচ্ছিলেন। এ সময় ডা. বিধান পোদ্দার তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে নারায়ণগঞ্জ গণগ্রন্থাগারে পৌঁছানো মাত্র তার ওপর অতর্কিত হামলা করেন ডা. আতিকুজ্জামান সোহেল ও তার অনুসারীরা।

এ সময় স্বাচিপের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলন এমন কাণ্ডে হতভম্ভ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় জনতা ও চিকিৎসকদের সহযোগিতায় ডা. আতিকুজ্জামান সোহেলের হামলা থেকে ডা. বিধান পোদ্দারকে উদ্ধার করা হয়। 

এ বিষয়ে হামলার শিকার ডা. বিধান পোদ্দার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার সঙ্গে হামলাকারী ডা. আতিকুজ্জামান সোহেলের বিগত কয়েক বছরে কোথাও কোনো কথা বা দেখাও হয়নি। সর্বশেষ বিএমএ নির্বাচনে তিনি আমার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন। তার সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। ঘটনার দিন আমি গণগ্রন্থাগারে পৌঁছানো মাত্র ডা. সোহেল, ডা. নিজাম ও ডা. অলোকসহ বেশ কয়েকজন বহিরাগত সন্ত্রাসী আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুই এখানে কী করিস’? উত্তরে আমি কিছু বলা কিংবা বুঝে ওঠার আগেই তারা আমার ওপর অতর্কিত হামলা করেন। এ সময় তারা আমাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় আমাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, আমাকে যেভাবে হামলা করা হয়েছে আমার কাছে মনে হয়েছে হত্যার পরিকল্পনা করেই তারা এই হামলা করেছেন। আমি একজন সরকারি চিকিৎসক। আমি আইনের প্রতি আস্থাশীল, তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. দেবাশীষ সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নির্বাচনের লক্ষ্যে প্যানেল পরিচিতি সভায় স্বাচিপের মহাসচিব নারায়ণগঞ্জের গণগ্রন্থাগারে সকলের সঙ্গে দেখা করার জন্য উপস্থিত হয়েছেন। সাধারণ ভোটাররা তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য সেখানে সমবেত হবেন। এমন সময় ডা. বিধান সেখানে গেলে তার ওপর হামলা করেন ডা. সোহেল ও বেশ কিছু বহিরাগত সন্ত্রাসী। পরে আমি ও সাধারণ ভোটাররা তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করি। এ সময় তার বুকে, চোখে ও কানে মারাত্মক যখমের চিহ্ন দেখা যায়। তিনি একজন সরকারি চিকিৎসক, তার ওপর এভাবে বহিরাগতদের নিয়ে হামলার ঘটনায় আমিসহ বিএমএর সকল চিকিৎসক ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাই।

স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বীরু জানান, একজন চিকিৎসকের ওপর এভাবে হামলা চালানো খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের চিকিৎসকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ঘটনায় জড়িত ডা. আতিকুজ্জামান সোহেলকে বহিষ্কারসহ আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলন বলেন, বিষয়টি ন্যাক্কারজনক। আমি এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বর্তমানে সিনেট নির্বাচন নিয়ে কিছুটা ব্যস্ত আছি। তবে এ বিষয়ে খুব দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডা. আতিকুজ্জামান সোহেলের মতামত জানার জন্য তাকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, হামলার শিকার স্বাচিপের সাধারণ সম্পাদক ডা. বিধান পোদ্দার বাদী হয়ে দুইজনের নাম উল্লেখসহ আরও ৫-৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলছে। 

আবির শিকদার/আরএআর