প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর লালমনিরহাটের 'লালমনি লোকজ উৎসবে' এলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এ সময়  দীর্ঘসময় তাকে স্বাগত জানাতে না খেয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ১০৩ শিক্ষার্থী। ফলে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থবোধ করেন।

এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন, 'লালমনি লোকজ উৎসবে' বিকেল ৫টার দিকে মাঠে লোকজন না থাকায় তিনি সেখানে সঠিক সময় যাননি। 

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে লোকসংস্কৃতি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র আয়োজিত পরিত্যক্ত এম.টি হোসেন ইনস্টিটিউটে মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে আসেন জিএম কাদের। পরে স্বাধীনতার ৫২ বছর পূর্তিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে 'লালমনি লোকজ উৎসব' উদ্বোধন করেন তিনি।

এর আগে দুপুরে ওই মাঠে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুশীলন করান বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কিন্তু এতক্ষণে শিক্ষার্থীদের কিছু খাওয়ানো হয়নি বলে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা অভিযোগ করেন।

জানা গেছে, পরিত্যক্ত এম.টি হোসেন ইনস্টিটিউট মাঠে তিনদিন ব্যাপী 'লালমনি লোকজ উৎসবের আয়োজন করা হয়। সেখানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে খুশি করতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা হয়। পরে দুপুরে মাঠে শিক্ষার্থীদের অনুশীলন করানো হয়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের কোনো কিছু খাওয়ানো হয়নি বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিরা জানান, দুপুর থেকে 'লালমনি লোকজ উৎসব' লোক সমাগম বাড়াতে থাকে। শিক্ষার্থীদের ওই মাঠে দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রাখায় অনেকেই অসুস্থ বোধ করেন। 

শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে স্নিগ্ধা, আয়শা সিদ্দিকসহ অনেক শিক্ষার্থীরা জানান, দুপুরে বাড়ি থেকেই তারা খেয়ে এসেছেন। জোর করিয়ে এখানে নিয়ে এসেছেন কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষকের সম্মান রক্ষা করতে এই অনুষ্ঠানে এসেছেন। তবে দুপুর থেকে সন্ধ্যা অব্দি কিছু খাওয়ানো হয়নি বলে তাদের শারীরিকভাবে কিছুটা খারাপ লেগেছে । 

তারা আরও বলেন, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন শেষে পৌর মেয়র রেজাউল করিম স্বপন শিক্ষার্থীদের জন্য মিষ্টি বরাদ্দ দেন। সেই বরাদ্দের টাকায় তাদের মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। 

প্রধান অতিথি দেরিতে আসায় তাদের কোনো সমস্যা হয়েছে কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষার মাধ্যমে আমরা স্বশিক্ষিত হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। গুরুজনদের সম্মান জানাতে আমরা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম। মাথা ঘোরানোসহ অসুস্থ বোধ করলেও কোনো উপায় ছিল না। স্যারদের খুশি রাখতে আমরা সব সময় প্রস্তুত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন পৌর মেয়র রেজাউল করিম স্বপন। এরপরেই প্রধান অতিথি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের জন্য তারা অপেক্ষা করেন। কিন্তু সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এটি একেবারে ঠিক হয়নি। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকায় অনেকেই অসুস্থতা বোধ করেন।  

লালমনি লোকজ উৎসব কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হেলাল কবির বলেন, বিকেল পাঁচটায় জিএম কাদের আসার কথা ছিল। উনি অনুষ্ঠানস্থলের খবর নিয়ে সন্ধ্যার পর আসেন।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন বলেন, জিএম কাদের স্যার বিকেল ৩টায় লালমনিরহাট সার্কিট হাউজে এসেছেন। পরে বিকেল ৫টায় লালমনি লোকজ উৎসবে আসার কথা থাকলেও তিনি খোঁজ-খবর নিয়েছেন এখানে লোক নেই। পরে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে এখানে এসেছেন।

লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, ১০৩ শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রথমে এগারোটার দিকে অনুশীলন করানো হয়। পরে চারটার পর প্রধান অতিথি জি এম কাদেরের জন্য সেখানে যাওয়া হয়। কিন্তু তিনি ওই সময় না আসায় পাঁচটায় জাতীয় সংগীত পরিবশন করে শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্ধ্যা সাতটার পর প্রধান অতিথি জি এম কাদের এলে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে শিক্ষার্থীরা চলে আসে।

শিক্ষার্থীদের কোনও কিছু খাওয়ানো কিংবা টাকা দিয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর হোসেন বলেন, না- তারা কোনও টাকা দেননি, তবে রোববারে দেখা করতে চেয়েছেন বলেও তিনি জানান।

জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারী বলেন, শিক্ষার্থীকে দিয়ে এমন কাণ্ড কখনোই ঠিক নয়। অফিসিয়ালি এমন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী নিয়ে যাবে সেটিও আমাদের জানানো হয়নি। এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা অফিসার বলেন, খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/এমএএস