ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা

কালের পরিক্রমায় অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় যুবলীগের উদ্যোগে মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) বিকেলে সদর ইউনিয়নের জাটিগ্রামে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে এসে প্রায় ১০ সহস্রাধিক মানুষ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা উপভোগ করে।

জানা যায়, সদর ইউনিয়নের জাটিগ্রামে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে দুপুর থেকেই নানা বয়সী মানুষ দলে দলে ছুটে আসে। ঘোড়দৌড়কে ঘিরে বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গ্রামীণ মেলা বসে। মেলায়ও উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। মোট ৩১টি ঘোড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। 

ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অধিকার করে ৫ হাজার টাকা পুরষ্কার পায় পোড়াখালীর হাজিউজ্জামানের ঘোড়া, ২য় স্থান অধিকার করে ৪ হাজার টাকা পুরষ্কার পায় রানাগাতির আক্কাস মল্লিকের ঘোড়া, ৩য় স্থান অধিকার করে ৩ হাজার টাকা পুরষ্কার পায় যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার আনোয়ার শেখের ঘোড়া এবং চতুর্থ স্থান অধিকার করে ৩ হাজার টাকা পুরষ্কার পায় খুলনার বৈঠাখালীর নাদির শেখের ঘোড়া।

আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য সৈয়দ শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান একেএম আহাদুল হাসান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলফাডাঙ্গা থানার ওসি মো.ওয়াহিদুজ্জামান, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাসমত হোসেন তালুকদার তপন, বানা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাজ ইসলাম খোকন, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, সাংবাদিক মো. ইকবাল হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সদস্য রবিউল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সজিব মিয়া। 

নড়াইল থেকে ঘোড়দৌড় দেখতে আসা আসলাম শেখ বলেন, অনেক দিন আগে ঘোড়দৌড় দেখেছি। এখন আর কোথাও ঘোড়দৌড় হয় না। এই আয়োজনের কথা জানতে পেরে দেখতে এসেছি। এসে ভালো লাগছে। 

ঘোড়দৌড় দেখতে আসা কলেজছাত্রী কবিতা বলেন, ঘোড়দৌড় কোনো দিন দেখিনি, তাই দেখতে এসেছি। অনেক মানুষের ভিড় হয়েছে। আমার মতো অনেকেই ঘোড়দৌড় দেখতে এসেছে। 

তিনি আরও বলেন, ঘোড়দৌড়ের পাশাপাশি মেলা বসেছে। মেলায় গ্রামীণ অনেক জিনিসপত্র উঠেছে, অনেক কিছু কিনেছি। প্রতিবছর হলে ভালো লাগতো।

ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজক আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য সৈয়দ শরিফুল ইসলাম বলেন, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ঘোড়দৌড় হারিয়ে যেতে বসেছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে স্থানীয় যুবলীগের উদ্যোগে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ঘোড়া নিয়ে আসেন ঘোড়ার মালিকরা। প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন।

তিনি আরও বলেন, ঘোড়া জোগাড় করা অনেক কঠিন। দেশের বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য ৩০টি ঘোড়ার মালিককে রাজি করানো হয়। তাদের আসা-যাওয়া, খাবার খরচসহ অনেক টাকা দিতে হয়েছে। টাকা খরচ হলেও হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য মানুষের মাঝে কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনতে পেরেছি এটাই আনন্দের।

বি কে সিকদার সজল/আরএআর