রংপুরের বদরগঞ্জে এক বিধবাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে কৌশলে তার জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের (এমপি) চাচা জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তিনি বিভিন্ন কৌশল ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আরও অনেকের জমি প্রতারণার মাধ্যমে নিজ দখলে রেখেছেন। তার পরিবারের ভয়ে শঙ্কিত গ্রামের লোকজন।

শুক্রবার (৩ মার্চ) দুপুরে বদরগঞ্জ উপজেলার ডিগ্রি কলেজ রোড সংলগ্ন একটি চাতালে সংবাদ সম্মেলন করে জমি দখলের এসব অভিযোগ তুলে ধরেন গুলশান আরা বেগম লাকী নামে এক বিধবা নারী। তিনি ডাক্তারপাড়া এলাকার প্রয়াত মমিন শাহ ওরফে মানিক শাহের স্ত্রী এবং স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গুলশান আরা বেগম বলেন, আমি একা এবং বিধবা হওয়ায় স্বামীর রেখে যাওয়া যতটুকু সম্পদ ছিল তার সবগুলো ঠিকমত গুছিয়ে নিতে না পারায় নিজের মধ্যে হতাশা কাজ করত। এরই মধ্যে আমাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে এগিয়ে আসেন জাহেদুল হক চৌধুরী। তিনি সমাজের একজন সম্মানিত ব্যক্তি হওয়ায় এবং আমার সমস্যাগুলো সমাধানে কারো সহযোগিতা নেওয়া প্রয়োজন মনে করে আমিও তাকে বিশ্বাস করি। জাহেদুল হকও আমার জমি সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন।

বিধবা এই নারীর অভিযোগ, সহযোগিতা করার কথা বলে প্রথমে জাহেদুল হক চৌধুরী তার নিজের রাস্তার জন্য তিন শতক জমি অদল-বদল করার প্রস্তাব দেন। পরবর্তীতে তিন শতক জমি লিখে নিয়ে উল্টো অদল-বদলের শর্ত উপেক্ষা করে এক শতক জমি কম লিখে দেন এবং সিদ্ধান্ত হয় যার যার নামে লিখে দেওয়া জমিসহ বাকি জমিগুলো পরবর্তীতে সঠিকভাবে পরিমাপ করা হবে।

গুলশান আরা বেগম বলেন, জাহেদুল হক চৌধুরীকে আমার তিন শতক জমি লিখে দেওয়ার পর তিনি আমার দেবরদের দখলে থাকা জমি  উদ্ধারের আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে জমি উদ্ধার করে সমবণ্টন করার কথা বলে কয়েকটি স্টাম্পে স্বাক্ষর নেন। কিন্তু পরে জানতে পারি জাহেদুল হক চৌধুরী কৌশলে দেবরদের নামে আমার জমি লিখে নিয়েছেন। এ ঘটনায় আমি দলিল বাতিলের জন্য দেবরদের বিরুদ্ধে মামলা করলে বিজ্ঞ আদালতে আমার পক্ষে রায় দেন।

তিনি আরও বলেন, জাহেদুল হক চেধৈুরী আমার তিন শতক জমি তার নামে লিখে নিয়েও থেমে থাকেননি। উল্টো আমার ভোগ দখলীয় জমি থেকে আরও প্রায় ১০ শতক জমি জোর করে দখলে নিয়ে ব্যবহার করে আসছেন। দখলে নেওয়া জমি ছেড়ে দিতে বললে আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন। আমি জমি মাপতে গেলে জাহেদুল হক চৌধুরী এবং তার ছেলে পলিন চৌধুরী ও চন্দন চৌধুরী আমার ওপর চড়াও হন। তাদের কারণে আমি নিজ বাসা ছেড়ে অন্যত্রে ভাড়া বাসায় বসবাস করছি। সরকারি নিয়মানুযায়ী জমি মেপে অবৈধ দখলদার জাহেদুল হক চৌধুরীর কাছ থেকে নিজ জমি উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। 

জমি  উদ্ধারে গুলশান আরা বেগম রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউককে বিষয়টি অবগত করলেও আজো কোনো সমাধান মেলেনি। উল্টো সংসদ সদস্যের চাচা পরিচয়ে জাহেদুল হক চৌধুরী অসহায় গুলশান আরা বেগমের সরলতা ও বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তার জমিজমা, বাসা আত্মসাৎ করাসহ তাকে সর্বস্বান্ত করার পায়ঁতারায় লিপ্ত রয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে স্কুলশিক্ষিকা গুলশান আরা বেগম লাকী ছাড়াও তার আত্মীয়-স্বজন এবং গ্রামের স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে জাহেদুল হক চৌধুরীকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর