পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নুর আলামিন (১১)। পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পেয়েছিল সে। কিন্তু সেই ফলাফল স্থগিত করে সংশোধিত ফলাফল প্রকাশিত হয়। সংশোধিত ফলাফলে বৃত্তি না পেয়ে হতাশ নুর আলামিন।

২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নুর আলামিন। বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় তার রোল ছিল ৭৩৬। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বৃত্তি পরীক্ষার ঘোষিত ফলাফল ৩ ঘণ্টার মধ্যে স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে আবার বুধবার (১ মার্চ) সংশোধিত ফলাফল প্রকাশিত হয়। এ ফলাফলে বৃত্তি মেলেনি নুর আলামিনের। বর্তমানে সে কালাইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। 

বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের মৃধা বাড়ির জামাল মৃধার ছেলে নুর আলামিন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট নুর আলামিন। 

নুর আলামিন বলে, গত মাসের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমি জানতে পারি বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আমি মোবাইলে আমার রোল নম্বর দিয়ে দেখেছি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। আমার প্রতিবেশী ও নানাবাড়ির আত্মীয়-স্বজনদের জানিয়েছি তারা খুশি হয়েছে ও মিষ্টি খাইয়েছি। কিন্তু পরের দিন সকালবেলা জানতে পারি আমাদের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। আমি সেখানে সাধারণ বৃত্তিও পাইনি।

নুর আলামিনের বাবা জামাল মৃধা বলেন, আমার ছেলে পড়ালেখায় খুব ভালো ছিল। সে প্রথমে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে, সেটা আবার বাদ গেছে। নতুনভাবে পরীক্ষা হলে ভালো হতো।

নুর আলামিনের মা শিখা বেগম বলেন, আমার ছেলে পড়াশোনায় খুব ভালো। সে প্রতিদিন স্কুলে যায়। কখনো স্কুল মিস করে না। প্রতিদিন প্রাইভেটে যেত বাসায় নিয়মিত পড়াশোনা করত। বৃত্তি পরীক্ষার রেজাল্ট শোনার পর আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে রেজাল্ট শুনে ছেলেটি ভেঙে পড়েছে। আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাই এই রেজাল্ট আবার পুনরায় সংশোধন করা হোক।

নুর আলামিনের বাসার শিক্ষিকা উম্মে হানি বলেন, নুর আলামিন অনেক ভালো পড়াশোনা করে। ওর বৃত্তি পাওয়ার সংবাদ শুনে আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে রেজাল্ট খারাপ হয় আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি।

শিশু সাংবাদিক মুনতাসির তাসরিপ বলে, দীর্ঘ সময় পরে শিক্ষার্থীরা অনেক আগ্রহ সহকারে বৃত্তি পরীক্ষা দিয়েছে। বাউফলের একটি ছেলে নুর আলামিন সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে খুব আনন্দিত হয়েছিল। কিন্তু পরদিন আমরা দেখতে পাই সে কান্না করছে। তার বাবা-মায়ের মন খারাপ। 

উত্তর কালাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. রুহুল আমিন বলেন, টেকনিক্যাল প্রবলেমের কারণে যারা বৃত্তি পাওয়ার যোগ্য নয় তারাও বৃত্তি পেয়েছে। এ বিষয়ে সরকার দুঃখ প্রকাশ করে পুনরায় আবার বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করছে। আমার স্কুলে এখন চারজন সাধারণ বৃত্তি পেয়েছে এর মধ্যে তিনজন ছেলে ও একজন মেয়ে। এর আগে ভুল যখন প্রকাশিত হয়েছিল তখন পাঁচজন ছেলে বৃত্তি পেয়েছিল।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বখতিয়ার রহমান বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে এই ভুলটা হয়েছে, আমাদের অধিদপ্তরের ভুল হয়েছে। ইন্টারনেটের কারণে এই ভুল হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তো আমাদের কিছু করার নেই। পরবর্তী সময়ে আমাদের আইটি সেক্টরে যারা রয়েছেন তারা অবশ্যই সতর্ক থাকবেন। 

মাহমুদ হাসান রায়হান/আরএআর