ময়মনসিংহ নগরীর প্রভাত ফেরী মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে নির্যাতনে আনোয়ার হোসেন আরমান (১৯) নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (৭ মার্চ) সকালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাদকসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিককে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

জানা গেছে, নগরীর মাসকান্দা বলাশপুর নয়াপাড়া এলাকায় গত ১৩ বছর ধরে প্রভাত ফেরী নামে একটি মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র চলছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে আনা হয় জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের তরফপাছাইল গ্রামের আবদুল আউয়ালের ছেলে আরমানকে। তিনি স্থানীয় ধনিয়াকান্দি ফাজিল মাদরাসার আলিম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

পরিবারের সদস্যরা জানান, গত কয়েক মাস ধরে আরমান মাত্রা অতিরিক্ত অত্যাচার করছিল পরিবারের ওপর। মাদকের টাকার জন্য চাপ দিত। গত তিন দিন ধরে মাদক সেবন করে উশৃঙ্খল আচরণ করেছে। ওই অবস্থায় গত সোমবার দুপুরে আরমানের বাবা প্রতিবেশী স্থানীয় ইউপি সদস্য শরাফ উদ্দিনের সঙ্গে পারমর্শ করেন। ইউপি সদস্যের পরামর্শে বিকেলে খবর দেওয়া হয় প্রভাত ফেরী মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে। কেন্দ্রটি থেকে অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি দল বাড়ি থেকে নিয়ে আসে আরমানকে। কেন্দ্রে আসতে না চাইলে পথে আরমানকে রশি দিয়ে বেঁধে আনা হয়। 

মধ্যরাতে বমি করেন আরমান। সকাল ৯টার দিকে আলাদা একটি কক্ষে নেওয়া হয় তাকে। এরপরই আরমান অসুস্থ হয়েছে বলে পরিবারকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক মৃত্যুর প্রমাণপত্রে উল্লেখ করেন, মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল রোগীকে। শরীরের বিভিন্ন অংশে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল। 

আরমানের বাবা আবদুল আউয়াল জানান, ছেলেকে সুস্থ করার জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু সকালে একবার জানানো হয় ভালো, আরেকবার বলা হয় অসুস্থ, পরে মৃত্যুর খবর দেওয়া হয় তাদের। কিন্তু ছেলের কাছে গিয়ে দেখেন শরীরজুড়ে অসংখ্য আঘাতের চি‎হ্ন রয়েছে। 

প্রভাত ফেরী মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মো. রাজিবুল আলম রনি বলেন, রোগী গাঁজা ও পেস্টিং খেতো। আনার সময় লোকজনের সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে কামড় দেওয়ায় তাকে বেঁধে আনা হয়। কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলম বলেন, রোগীকে বেঁধে আনার কোনো নিয়ম নেই। রোগীকে আনার পর কোনো ডাক্তার দেখানো হয়নি। রাতের বেলায় রোগী বমি করলেও হাসপাতালে নেওয়া কিংবা ডাক্তার দেখানো হয়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, মৃতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

উবায়দুল হক/আরএআর