নিহত আবু জাফর সিদ্দিক তারেক ও মহিউদ্দিন আখন্দ

রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে মুন্সীগঞ্জের দুইজন রয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন জেলার আরও একজন।

নিহতরা হলেন- মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি পশ্চিমপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মোজাম্মেল হক খোকার ছেলে আবু জাফর সিদ্দিক তারেক (৩৩) ও মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের সৈয়দপুর এলাকার মৃত সমির আখন্দের ছেলে মহিউদ্দিন আখন্দ (৫০)। 

এদের মধ্যে আবু জাফর সিদ্দিক তারেক  নির্মাণাধীন নিজ বাড়ির জন্য স্যানিটারি পণ্য কিনতে ঢাকায় গিয়েছিলেন। পরে ক্যাফে কুইন রেস্টুরেন্টে খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। এ সময় বিস্ফোরণে তার মৃত্যু হয়। তার সঙ্গে যাওয়া খালাতো ভাই আলাদ হোসেনের (২৫) শরীরের ৬০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে রয়েছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

নিহত তারেকের স্বজন আমিরুল ইসলাম জানান, পরিবারের সবাইকে নিয়ে তারেক ঢাকা বসবাস করতেন। বিয়ে করার জন্য কিছু দিন যাবত পাত্রী দেখছিলেন। মূলত বিয়ের জন্যই নির্মাণাধীন বাড়ির কাজ করতে বাবার পৈতৃক বাড়িতে গজারিয়ায় এসেছিলেন। বিস্ফোরণের দিন ঢাকায় গিয়েছিলেন স্যানিটারি মালামাল কিনতে। আকস্মিক বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

তিনি আরও বলেন, বুধবার (৮ মার্চ) সকাল ৮টার দিকে বালুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তারেকের জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়। তারেক খুব ভালো ছেলে হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিল। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নিহত অপরজন মহিউদ্দিন আখন্দ ক্যাফে কুইন মার্কেটের একটি স্যানিটারি দোকানের ম্যানেজার ছিলেন। গত দুই বছর যাবত ওই মার্কেটের আজাদ স্যানিটারিতে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। এর আগে আলুবাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল তার। কিন্তু ব্যবসায় লোকসান হওয়া দোকান ছেড়ে দেন।

নিহত মহিউদ্দিনের ভাতিজি পারভিন বেগম বলেন, গতকাল বিস্ফোরণের সময় তিনি (মহিউদ্দিন) দোকানেই বসা ছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন তিনি। তার মৃত্যুর খবরে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন তার স্ত্রী। কিছুক্ষণ পর পর তার দাঁত লেগে যাচ্ছে। যখন হুঁশ ফেরে তখনই বলছেন- ‘গতকালকে আমাকে বলেছিল সে বাসায় আসবে, শবে বরাতের নামাজ পড়বে। আর বিকেল বেলা জানতে পারলাম সেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে। আমার স্বামী তো এলো তবে লাশ হয়ে এলো। এখন আমি আমার দুইটা সন্তান নিয়ে কোথায় যাব? কী করব?

তিনি জানান, বুধবার সকালে আধারার সৈয়দপুর আল আমিন দাখিল মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে এলাকার একটি সামাজিক কবরস্থানে মহিউদ্দিন আখন্দের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে একটি ৭ তলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বুধবার বিকেল পর্যন্ত ২০ জনের মরদেহ উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমা‌নে ২০ জন চি‌কিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন ১১ জন।

ব.ম শামীম/আরএআর