শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লক্ষ্মীপুরের এমরান হোসেন। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্যই তিনি প্রথম ঢাকায় যান। এর আগে কখনও তার ঢাকায় যাওয়ার সুযোগ হয়নি। চার বোনের মাঝে তিনি ভ্যানচালক বাবার একমাত্র ছেলে। অর্থ না থাকলেও পরিবারের অঢেল ভালোবাসায় সিক্ত এমরান চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণের এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। 

জানা গেছে, বাড়ি থেকে জেলা শহরে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে যাতায়াত খরচ বহন করা সম্ভব হতো না এমরানের পরিবারের। এতে তিনি কলেজে নিয়মিত যেতেন না। তবে কলেজের সবগুলো পরীক্ষাতেই তিনি ভালো ফলাফল করতো বলে জানা গেছে। তার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কালো ছায়া দূর হবে বলে আশাবাদি শিক্ষকরা।  

এমরান লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের মিয়াপাড়া এলাকার ভ্যানচালক মো. ইউসুফের ছেলে। তিনি সংসারের দ্বিতীয় সন্তান। বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে হাজিরহাট মিল্লাত একাডেমি থেকে এসএসসি ও লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে তিনি জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

এমরানের বাবা মো. ইউছুফ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাবার কষ্টে উপার্জিত অর্থের অপচয় করার মতো ইচ্ছে কখনো এমরান তার মনে জাগ্রত হতে দেয়নি। বাবা-মা ও বোনেরা তাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই ছোটবেলা থেকে তিনি পড়ালেখা করে আসছে। ঢাকা কখনও যাওয়ার সুযোগ হয়নি তার। এসএসসি ফলাফলের পর তিনি লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণও হয়েছেন। স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার। এতে প্রথবারের জন্য বুধবার (৮ মার্চ) তিনি ঢাকা গিয়ে এক আত্মীয়ের কাছে উঠেন।

শুক্রবার (১০ মার্চ) মেডিকেলে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়ে ওই আত্মীয়ের সঙ্গেই ঢাকায় ছিলেন। রোববার (১২ মার্চ) মেডিকেলে ভর্তির ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে তিনি ৪৭৯তম স্থান অর্জন করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

এমরান হোসেনের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে এমারন হোসেন স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, তিনি ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছেন। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগের খবর পেয়ে তার বাবা-মা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেই ফলাফল পাওয়ার পরপরই তিনি ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন।

চরকাদিরা কে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইফতেখার মাহমুদ শিবলু বলেন, এমরান আমার প্রতিবেশী। খুব সাদামাটা জীবন তার। সম্পূর্ণ নিজের মেধা ও চেষ্টা দিয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। মেডিকেলে ভর্তির জন্য সবাই কোচিংয়ের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কিন্তু এমরান কারও কাছে কোচিং অথবা প্রাইভেটও পড়েনি। পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার মধ্য দিয়ে এ সুযোগটি তার জন্য পৃথিবী জয়ের আনন্দে পরিণত হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. রিয়াজ বলেন, এমরান আমার প্রতিবেশী। সে খুব গরিব ঘরের সন্তান। আমাদের এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থী। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে সে তার স্বপ্নের এক ধাপ এগিয়ে গেছে। সবার কাছে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফিরোজ আলম বলেন, এবার আমাদের কলেজ থেকে ৫ জন মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এরমধ্যে এমরান একজন। ছেলেটি খুব মেধাবী। তার ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। আমার সঙ্গে প্রথম ছেলেটিকে আমাদের কলেজের লাইব্রেরিয়ান সাজ্জাদুর রহমান পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ২-৩ মাস সে আমার কাছে ক্লাসের বাইরে পড়েছিল। প্রতিদিন বাড়ি থেকে কলেজ আসতে তার প্রায় ১০০ টাকার মতো খরচ হতো। এ খরচ বহন করা তার জন্য কষ্টসাধ্য ছিল। এজন্য আমার কাছে আর পড়তে আসেনি। ক্লাসেও নিয়মিত উপস্থিত থাকতে পারতো না। তবে সবগুলো পরীক্ষায় সে ভালো ফলাফল করতো। 

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, বিষয়টি শুনেছি। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হলে অবশ্যই তাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএএস