উপজেলা চত্বরে গাছ পেরেকমুক্তের শুভ উদ্বোধন করেন

‘গাছ আমাদের অক্সিজেন, ফুল, ফল, ছায়া দেয়। গাছ নানাভাবে মানুষকে উপকার করে। মানুষের পরম বন্ধু গাছ। গাছের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা সম্ভব না। গাছ আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য গাছকে অনেকে আঘাত করে, গাছে পেরেক মারে। গাছেরও জীবন আছে। গাছে পেরেক মারলে গাছ কষ্ট পায়। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই তা অনুভব করে না।’

এমন ভাবনা থেকেই কৃষক পিয়ারুল ইসলাম গাছকে বাঁচাতে এক মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন। শুরু করেছেন গাছ থেকে পেরেক অপসারণের কাজ। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সকালে উপজেলা চত্বরে এর শুভ উদ্বোধন করেন ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল মারুফ।

অনেকে গাছকে মুখে বলে ভালোবাসি, কিন্তু প্রকৃতভাবে ভালোবাসে না। কারণ, অনেকেই গাছে পেরেক মারে। গাছের প্রতি ভালোবাসার জায়গা থেকে আমি এই কাজ শুরু করেছি। যারা গাছে পেরেক মারে, তারা গাছকে কষ্ট দেয়। গাছের কষ্ট অনুভব করে আমি ভেড়ামারা শহরের কয়েকটি গাছের পেরেক অপসারণের মাধ্যমে শুরু করেছি। আগামীতেও এই কাজ করা অব্যাহত রাখব।

পিয়ারুল ইসলাম

তিনি বলেন, প্রায় লক্ষ করা যায় রাস্তার পাশে বিভিন্ন নামিদামি লোকের বা পেশার মানুষের নাম-পদবি খচিত সাইনর্বোড লোহার পেরেক দিয়ে বসানো বা আটকানো থাকে গাছের শরীরে। গাছকে এভাবে আঘাত করা জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। গাছের কষ্ট দেখে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি গাছ থেকে পেরেক তুলতে কাজ করব। এর আগেও আমি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ধারে প্রায় তিন হাজার তালের বীজ রোপণ করেছি।

যেসব এলাকায় গাছ বেশি, সেখানে বন্যা-ঝড় তেমন ক্ষতি করতে পারে না। গাছপালা মায়ের আঁচলের মতো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ গাছ মানুষকে আগলে রেখে রক্ষা করে। এ জন্য সবাইকে গাছের পরিচর্যা ও গাছ লাগাতে হবে জানান পিয়ারুল।

কুষ্টিয়ার প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি শাহাবুদ্দিন মিলন ঢাকা পোস্টকে জানান, গাছে লোহার পেরেক দিয়ে আঘাত করে সাইনবোর্ড আটকানো গাছের প্রতি নিষ্ঠুর কাজ। এতে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়। এ জন্য গাছ বাঁচানো ও বেশি বেশি গাছ লাগানো জরুরি। কারণ, একটি দেশের মোট ভূখণ্ডের কমপক্ষে ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের আছে মাত্র ১৭ দশমিক ৫ ভাগ। দিন দিন তা কমে আসছে, বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে।

এককথায় গাছের গাছ বাঁচালে মানুষ বাঁচবে, গাছ না বাঁচালে মানুষও বাঁচবে না। গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আবহাওয়া বদলে গেছে। এ জন্য এখন গরমের সময় ঠান্ডা, ঠান্ডার সময় গরম পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। পরিবেশ-প্রকৃতি বাঁচাতে গাছ লাগানো ও পরিচর্যার বিকল্প নেই।

ইউএনও সোহেল মারুফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাছ আমাদের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করে। প্রকৃতির শোভাবর্ধনেই নয়, গাছ থেকে যে পরিমাণ অক্সিজেন আমরা গ্রহণ করি, ঠিক সেই পরিমাণ মানুষের শরীর থেকে বের হওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেয় গাছ। তাই পিয়ারুল ইসলাম যে মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন, আমরা তাকে সহযোগিতা করব।

ইন্ডিয়ান ফরেস্ট ইনস্টিটিউটের গবেষকদের গবেষণা থেকে জানা গেছে, ৫০ বছর বেঁচে থাকা একটি গাছের আর্থিক সুবিধার মূল্য দাঁড়ায় ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এ জন্য আসুন সবাই গাছ রোপণ করি, গাছের পরিচর্যা করি। কারণ, গাছ না বাচঁলে মানুষ বাচঁবে না।

রাজু আহমেদ/এনএ