অবশেষে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) এলাকায় রমজানের পণ্য বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল থেকেই টিসিবির ডিলার পয়েন্টে কার্ডধারী ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। 

দেরি করে হলেও বিক্রি শুরু হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে কার্ডধারীদের মধ্যে। তবে অধিকাংশ দরিদ্র মানুষের কার্ড না থাকায় শতভাগ সুফল আসছে না বলে মনে করেন জনপ্রতিনিধিরা।

টিসিবির বরিশাল আঞ্চলিক শাখা থেকে জানানো হয়েছে, সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে ৯০ হাজার উপকারভোগীকে প্যাকেজ আকারে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে অনিয়ম রোধে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পণ্যের মধ্যে রয়েছে দুই লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি মশুরের ডাল এবং এক কেজি ছোলা। প্যাকেজমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭০ টাকা।

ক্রেতা আমিনুল ইসলাম শাহীন জানান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে বাজার থেকে চাল-ডাল-তেল ক্রয় করা অসম্ভব। এজন্য লাইনে দাঁড়িয়ে হলেও কিনছেন। 

তিনি বলেন, গত মাসে টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ ছিল। তখন খুব কষ্ট হয়েছে। রমজান উপলক্ষ্যে বিক্রি শুরু করেছে। আমাদের অনেক সাশ্রয় হচ্ছে। উচ্চমূল্যের এই বাজারে কম দামে পণ্য পাচ্ছি এটাই অনেক বড় প্রাপ্তি।

ফায়ার সার্ভিসকর্মী আব্দুল হাকিম বলেন, বাজারে দাম এত বেশি যে গরিব মানুষ বাজার থেকে চাহিদামতো কিনে খেতে পারছে না। সরকার টিসিবির মাধ্যমে একটু সুবিধা দিচ্ছে বলেই আমরা কিনে নিতে পারছি।

নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা টিসিবির পণ্যের জন্য অপেক্ষায় থাকি। টিসিবির পণ্যে কিছুটা সাশ্রয় হয়।

ডিলার আব্দুস সালাম বলেন, শুরুর দিনেই মানুষের চাহিদা অনেক। সবাই সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে মালামাল বুঝে নিচ্ছেন। প্রতি ডিলারের অনুকূলে ৮৭৪ প্যাকেজ পণ্য বরাদ্দ দিয়েছে টিসিবি।

আরেক ডিলার শহিদুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার ডিলারদের কাছ থেকে টাকা জমা নিয়েছে টিসিবি। বুধবার মালামাল বুঝিয়ে দিয়েছে আর আজকে আমরা বিক্রি করছি। 

তিনি বলেন, অনেকেই আসেন একই নামের দুটি কার্ড নিয়ে। তবে অনলাইনে চেক করার সিস্টেম থাকায় দুটি কার্ড দিয়ে দুই স্থান থেকে পণ্য তোলার কোনো সুযোগ নেই।

বিসিসির ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেন ভুলু বলেন, ওয়ার্ডের অনেকেই অসহায় হলেও আমরা কার্ড দিতে পারিনি বলে তারা সুবিধা পাচ্ছেন না। তবে গরিবদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কার্ডের সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন এই জনপ্রতিনিধি।

টিসিবির বরিশাল অঞ্চলের সহকারী পরিচালক শতদল মন্ডল বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনে একসঙ্গে একই দিনে ৯০ হাজার উপকারভোগীকে পণ্য সরবারহ করেছি। এসব পণ্য প্রক্রিয়াজাত করতে চার দিন বিলম্ব হয়েছে। অন্যান্য স্থানে হয়তো এক একটি ওয়ার্ডে কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু বরিশালে এক সঙ্গে চালু করায় দেরি হয়েছে।

তবে টিসিবির আঞ্চলিক শাখার দায়িযত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুমতি না পাওয়ায় গত চার দিনে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। 

এ বিষয়ে মেয়রের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সারাদেশে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ১০ মার্চ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই কার্যক্রম শুরু হলেও বরিশালে শুরু হলো পাঁচ দিন পর। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর