চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি বলেছেন, আমি খুবই আতঙ্কিত। আমার জিডিতে যা লেখা ছিল, যেমন একটা গ্রুপ গিয়ে জায়গা দখল করে নেবে এবং ওই সময় পুলিশ আমাদের সাহায্য করবে না, পুলিশ সাথে সাথে যাবে না। আমাদের সনিরাজ দখল হয়ে যাবে। আমার জিডির ভাষা অনুযায়ী কিন্তু সেই কাজটিই হয়েছে। আমাকে আজকে যেভাবে পুলিশ ট্রিট করেছে, আমার স্বামী দেশে ফিরলে তার বিরুদ্ধে আরও মামলা দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে টর্চার করবে। আমাদের পুরো সরকার পরিবারকে এই কমিশনার (মোল্লা নজরুল ইসলাম) বিতর্কিত করবে। আমার স্বামী আসার পর তাকে যেন টর্চার করা না হয়। ঘটনার সঠিক তদন্ত করা হোক। 

 শনিবার (১৮ মার্চ) রাত পৌনে ৮টার দিকে গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তিনি মহানগরের তেলিপাড়া এলাকায় নিজ মালিকানাধীন ফারিশতা রেস্টুরেন্টের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। 

মাহিয়া মাহি বলেন, আমি একটা পরিচিত মুখ হওয়ার পরও আমাকে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমি বার বার বলছিলাম প্রচণ্ড গরম লাগছে, আমার শ্বাসকস্ট হচ্ছে, আমি ঠান্ডা পানি চাচ্ছিলাম, পুলিশ আমাকে এক ঘণ্টা পরে পানি দিয়েছে। এতো কিসের গোপনীয়তা? আমি তো এ রকম কোনো আসামি না। আমি মাহি হয়েও আজকে আমার সাথে যা হয়েছে, আমি নয় মাসের প্রেগনেন্ট হওয়ার পরও মানবিকতা পাইনি, আমার স্বামীর বিরুদ্ধেও এ মামলা আছে। আমি আমার স্বামীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমাকে যখন কোর্টে নেওয়া হয়েছে। কোর্টে নেওয়ার পরে বিচারক তো আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে, তার কিছুই করেননি। 

তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছি, আপনি যখন সর্বোচ্চ অসহায় থাকবেন, আপনার জায়গা-জমি নিয়ে একজন চলে যাচ্ছে, আপনি এটা নিয়ে বহুদিন ধরে লড়াই করতেছেন, যখন আপনি এটার কোনো ন্যায়বিচার পাবেন না, তখন আপনি কী করবেন? আপনি কাকে বিচার দেবেন, আমি বিচার পাইনি, আমি একমাস ধরে ঘুরতেছি। একমাস ধরে সব জায়গায় অভিযোগ দিয়েছি। আমি অভিযোগ করার পর সে (পুলিশ) আরও বেপরোয়া হয়ে গেছে। সে বেপরোয়া হয়ে নয় মাসের প্রেগনেন্ট একটা মহিলাকে সেই এয়ারপোর্ট থেকে মনে হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী ধরে নিয়ে আসছে। একটা ঠান্ডা পানি দেওয়ার জন্য এক ঘণ্টা লাগছে। আমি শ্বাসকষ্টের রোগী। বলেছি আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তারা এটার কোনো তোয়াক্কা করেনি। আমাকে সেইভাবে ট্রিট করা হয়েছে। তাহলে বুঝেন এই লোকটা (পুলিশ কমিশনার) কতটুকু বেপরোয়া হয়ে গেছেন। এর বিরুদ্ধে আমি কী করব? যখন দেখতেছি আমার জায়গা নিয়ে চলে যাচ্ছে একজন লোক, তখন আমি দেশে নাই, দেশে থাকলে আমি সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারতাম, সামনে গিয়ে আমি ফাইট করতে পারতাম। তখন হয়তো ফাইট-মাইট করে মামলা হতো। সেটা তো করার সুযোগ নাই। তখন আমি কি করব, লাইভে না যেয়ে আমি কী করব। আমি লাইভে যাওয়ার আগে বারবার কমিশনারকে ফোন দিয়েছি। কিন্তু তিনি আমার কোনো কথা আমলে নেননি। 

প্রতিপক্ষের কাছ থেকে পুলিশের দেড় কোটি টাকার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে মাহি বলেন, পৃথিবীতে কিছু কিছু বিষয় আছে যেটা আপনি আসলে নিজে উপলব্ধি করবেন আপনি নিজে জানবেন। কিন্তু এসব বিষয়ে অনেক সময় আলামত থাকে না। আমি সামান্য জিডি করতে পারি নাই। জিডি করতে যখন গেছি তখন আমাকে থানা থেকে বলা হয়েছে ডিসির (উপ-পুলিশ কমিশনার) কাছে পারমিশন নিতে হবে। আমি যদি জিডি করতে না পারি, আপনি গিয়ে কীভাবে তা পারবেন একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে। তাহলে এই বিষয়টা নিয়ে অনেক দিন ধরে কমিশনারের নির্দেশে যখন আমার স্বামীর অন্যান্য জায়গা-জমি ইনকুয়ারি করতেছে, পুলিশ তো জায়গা জমি নিয়ে ইনকুয়ারি করার কথা নয়। পুলিশ জায়গা জমির কাগজ নেওয়ার কথা নয়, কিন্তু সে বারবার জায়গার কাগজ নিয়ে ডাকতেছে, সে কাগজ দেখবে। জমি-জমার বিষয়ে কাগজপত্র দেখবে আদালত। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহেবের সঙ্গে কথা বলব, তার কাছে আমার আইজীবীরা যাবেন, কথা বলবেন। তারাই ওই টাকার সত্যতা বের করবেন। 

এর আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় চিত্রনায়িকা মাহিকে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। পরে দুপুর সোয়া ১টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল হোসেনের আদালতে নিয়ে মাহির ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। সেসময় মাহির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। এ কারণে আদালতের বিচারক রিমান্ড মঞ্জুর না করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তাকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

পরে পরিবারের সদস্যরা মাহির জন্য আইনজীবী নিয়োগ করেন। বিকেল ৫টার দিকে একই আদালতে মাহির জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবীরা। সেই আবেদন বিবেচনা করে তাকে দুটি মামলাতেই জামিন দেন আদালত।

ফেসবুক লাইভে মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকার মানহানিকর তথ্য প্রচার করে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করেছেন- এমন অভিযোগে পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। গাজীপুর মেট্রোপলিটনের বাসন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ রোকন মিয়া বাদী হয়ে শুক্রবার (১৭ মার্চ) রাত ৯টার দিকে মামলাটি করেন। একই দিনে তাদের আসামি করে গাজীপুরের এক ব্যবসায়ী আরেকটি মামলা করেন।

শিহাব খান/আরএআর