বিএনপির স্থায়ী কমিটিরি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির কথা বলে লাভ নাই, এগুলো আপনারা সবাই জনেন। কারণ আমরা সবাই ভুক্তভোগী। তেলের দাম বেশি, চিনির দাম বেশি, গ্যাসের দাম বেশি, বিদ্যুতের দাম বেশি, বাংলাদেশে সব জিনিসের দাম বেশি। তবে সবচেয়ে সস্তা হলো আওয়ামী লীগ। এই একটা লক্ষণ ভালো যে সব জিনিসের দাম যতবার বাড়ে ঠিক ততবার আওয়ামী লীগের দাম কমে।

শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের খানপুরে ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল সড়কে মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকারের দুর্নীতির বিষয়ে আসলে আমরা সবাই জানি কিন্তু বলি না। আসলে আমরা ভুক্তভোগী। বাংলাদেশের সর্বস্তরে দুর্নীতি বিরাজমান। দুর্নীতি করে লাখ-কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নির্বাচন নির্বাচন বলেন, দেশে যদি টাকা না থাকে তবে এই দেশটাকে চালাবেন কীভাবে? তাই আজকে থেকে আমরা এই সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বিরোধী সমাবেশ শুরু করলাম। আপনারা জানেন বিদ্যুতের দাম কেন ঘন ঘন বাড়ে? আমাদের ২০০৮ সালে ঘরে ঘরে বিদ্যুতের স্বপ্ন দেখিয়েছিল এই সরকার। সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনে গেছে। কোথাও ২০ মেগাওয়াট কোথাও ৫০ মেগাওয়াট। এই কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের জন্য সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাক বা বন্ধ রাখুক, তাদের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। বিগত ১০ বছরে এই আওয়ামী লীগের আত্মীয়-স্বজনরা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে নিয়েছে।

ভারতের আদানি পাওয়ার থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই আদানিকে নিয়ে ভারতের পার্লামেন্টে পর্যন্ত সমালোচনা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে আদানি বাংলাদেশে দ্বিগুণ দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে। বলা হচ্ছে আদানি থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে। আসলে আসছে নাকি আসছে না সেটা বলা মুশকিল। তবে তাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ২৫ বছরে এক লাখ ১৬ হাজার কোটি ডলার ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। আমরা এই চুক্তি বাতিলের দাবি জানাই। কারণ এটা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ পরিবেশবান্ধব না হওয়ায় পৃথিবীর অনেক দেশেই এর অনুমোদন দেয় না। তবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কিছুটা সাশ্রয়ী। রামপাল নিয়ে কত আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেলাম কিন্তু কাজ হলো না। মজার বিষয় হচ্ছে যেখান থেকে কয়লা আমদানি করা হবে সেটাও আদানি কিনে নিয়েছে। 

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনার বিশেষ দুটি নীতি আছে, একটা হলো ভোট চুরি আর আরেকটা হল দুর্নীতি। এই দুই বিষয়ে যদি নোবেল পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকতো তবে শেখ হাসিনা বছরে কয়েকবার দুর্নীতিতে নোবেল পুরস্কার পেতেন। প্রবাদ আছে, ‘দইয়ের পাতিল ফাটসে, পেত্নীর কপাল লাগসে’। আজকে এই দেশের অবস্থাটা ঠিক এই রকম। একদিকে জনগণের কপাল পুড়তেসে আরেকদিকে এই সরকারের লুটেরাদের কপাল খুলতেসে। এই সরকারের আমলে কোথায় ঘুষ-দুর্নীতি নাই তাই বলেন। আপনারা পর্দার কথা জানেন, বালিশের কথা জানেন।

তিনি আরও বলেন, সরকারের টাকা চুরির সবচেয়ে বড় খাত হলো বিদ্যুৎ খাত। আর রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্টের কথা আমার পূর্ববর্তী বক্তা বলে গেছেন। আসলে মেগা প্রকল্প মানে হল মেগা চুরি। কুইক রেন্টাল মানে কুইক কমিশন। যে কারণে এই সরকার অবৈধ পন্থায় বিদেশে এতো টাকা পাচার করেছে। আজকে সর্বক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দুরাবস্থা বিরাজমান হলেও কোনো জবাবদিহিতা নেই। আমি নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাই আপনারা বেশি বেশি করে এই সরকারের দুর্নীতির বিষয়গুলো মানুষের সঙ্গে আলোচনা করুন। মানুষের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবু আর ইইসুফ খান টিপুর সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। 

আবির শিকদার/আরএআর