স্বাধীনতার সময় আমির আলীর বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। তার বাবা অসিম উদ্দিন ছিলেন দিনমুজুর। বাড়ি-ঘর ছিল না তাদের। আমির আলীর জীবন কেটেছে মানুষের বাড়িতে আশ্রিত থেকে। যুদ্ধের সময় বাবার সঙ্গে বিভিন্ন জনের বাড়িতে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। 

তারপর দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যে আমির আলী মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করতে পারেননি। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে স্বাধীন দেশেও নিজের একটা ঘর ছিল না তার। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের কল্যাণে এখন নিজের ঘর হয়েছে আমির আলীর। নিজের একটা স্থায়ী আবাসস্থল পেয়ে তিনি মুক্তির আনন্দ লাভ করেছেন। খুশি হয়ে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মনে হচ্ছে ৫২ বছর পর স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ স্বাদ পেলাম।

আমির আলীর বয়স এখন প্রায় ৬৭ বছর। দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার বসবাস। বড় ছেলে দিনমজুর ও ছোট ছেলে রিকশাচালক। বিয়ের পর থেকে পরিবার নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন তিনি।

আমির আলী বলেন, দেশ স্বাধীন হলো, বিয়ে করলাম, সংসার হলো। বাড়ি-ঘর না থাকায় শ্বশুরবাড়িতেই থাকতাম। নিজে একটি রিকশা কিনে চালানো শুরু করলাম। তবে দিন এনে দিন খাওয়া সংসারে যে আয় হতো তা দিয়ে নিজের একটা ঘর আর করতে পারিনি। ২০০৪ সালে আমাকে রাস্তায় বেঁধে রিকশাটিও নিয়ে যায় দুষ্কৃতিকারীরা। পরে আর রিকশা কিনতে পারিনি। তাই দিনমুজুরের কাজ শুরু করি। সারাদিন কৃষি শ্রমিক হিসেবে যে আয় হতো তা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে দিন চলছিল। আমার শ্বশুর মারা যাওয়ার পর স্ত্রী পৈত্রিক সূত্রে সামান্য কিছুর জমির মালিক হয়। কিন্তু স্ত্রীর ভাইয়েরা মিলে সেই জমির অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়।

আমির আলীর ছেলে ফুল মিয়া বলেন, গৃহহীন হওয়াটা আমাদের জন্য চরম কষ্টের। স্থানীয়রা আমাদের বিভিন্নভাবে অবহেলা করতো শুধু ঘর-বাড়ি না থাকার কারণে। এখন প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে ভিটে মাটির ব্যবস্থা হওয়ায় পরবর্তী প্রজন্ম ভূমিহীন অপবাদ মুক্ত হলো।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, আমির আলীরদের কষ্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুভব করেছেন বলেই তাদের জন্য গাজীপুরের শ্রীপুরের নয়াপাড়া গ্রামে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে। তারা এখন গৃহহীনের অপবাদমুক্ত। নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৪২টি পরিবারের পাশাপাশি গাজীপুরে এ পর্যন্ত ১৮১৭টি গৃহহীন পরিবারের মধ্যে জমিসহ ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ২২ মার্চ গাজীপুর জেলাকে গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করবেন ।

শিহাব খান/আরকে