ইনসেটে বিধবা আক্তারা খাতুন

‘জীবনডা ভর কষ্ট করছি বাজান। পুলাডা ছুডু থাকতেই হের বাপ মইরা গেছে৷ মাইনষের বাড়িত কাম করতাম আর গোয়ালঘরে রাইত কাডাইতাম। মেঘ আইলে ভিজতাম। এত কষ্ট কইরা পোলাডারে হাফেজ বানাইছিলাম। হেও দেহে না। আমার লাহান অভাগী দুইন্যাত কেউই নাই। কিন্তু অহন আমার মা শেখ হাসিনা আমারে বিল্ডিং ঘর বানাইয়া দিছে। এই হানো আরামে মরবার পারাম। আমি দুই হাত তুইল্লা দোয়া করি, আল্লাহ শেখ হাসিনারে বাঁচাইয়া রাহুক। হিরাবার ক্ষমতায় আহুক।’

কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের রায়মণি এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের নতুন ঘর পাওয়া বিধবা আক্তারা খাতুন। জীবন সায়াহ্নে এসে নিজের স্থায়ী ঠিকানা পেয়ে এখন স্বপ্ন বুনছেন একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার। 

শুধু আক্তারা খাতুন নন, তার মতো অসহায় ৫৩৯ অসহায়কে নতুন সুখের ঠিকানা উপহার দেওয়া হচ্ছে ময়মনসিংহে। আগামীকাল বুধবার (২২ মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ঘর বুঝে পাবেন বাছাইকৃত অসহায় মানুষগুলো। কিন্তু আগে ভাগেই অনেক অসহায় পরিবার সাজাতে শুরু করে দিয়েছেন নিজেদের স্থায়ী ঠিকানা।

একই এলাকায় ঘর পাওয়া নূর জাহান বিধবা হয়েছেন ১৬ বছর আগে। তার স্বামী মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। স্বামী হারিয়ে বিধবা নূর জাহান চার ছেলে ও তিন মেয়েকে বড় করেছেন। থাকতেন সরকারি জমিতে ছনের ঘরে। 

নূর জাহান জানান, ছেলেরা বিয়ে করে সবাই সবার মতো থাকে। আমি মানুষের কাছে হাত পেতে খাই। জীবন কাটিয়েছি ছনের ঘরে কষ্টে। এখন শেষ বয়সে এসে সুখের একটি ঠিকানা পেলাম।

মোজাম্মেল হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘মানুষের বাড়িত কামলা দিয়া জীবন পার করছি আমি। সরকারি জমিত ঝাপড়া ঘর দিয়া হারা জীবন থাকছি। বর্ষা আইলেই চরম কষ্টে দিন কাডানো লাগছে। কিন্তু এইবার প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পাক্কা ঘর পাইলাম। যা কোনোদিন কল্পনাও হরছি না।’

অসহায় মানুষগুলো যখন নিজেদের ঘর সাজাতে ব্যস্ত তাদের কার্যক্রম ঘুরে দেখেন স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান। তিনি বলেন, ঘরগুলো অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে শতভাগ ডিজাইন, স্পেসিফিকেশন ফলো করে নির্মাণ করা হয়েছে। এই পর্যায়ে ৩৩টি ঘর আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে ত্রিশাল উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হবে।

জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান জানান, ময়মনসিংহ জেলায় এখন পর্যন্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩২৯টি পরিবারকে। আগের চার উপজলোর সঙ্গে নতুন করে শতভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলার তালিকায় যুক্ত হচ্ছে ত্রিশাল, গৌরীপুর ও তারাকান্দা উপজেলা। সেই সঙ্গে চলতি অর্থবছরে আরও ৭৯৫টি ঘর দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

আগামীকাল ২২ মার্চ সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব ঘর উদ্বোধন করবেন। 

উবায়দুল হক/আরএআর