মুন্সীগঞ্জ পৌর কবরস্থান থেকে স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার (৪৭) মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মরদেহটি উত্তোলন করা হয়। মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুস শামার উপস্থিতিতে মরদেহ উত্তোলন করে নিহতের স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার (৩৩), নিহতের ছোট বোন ঝর্না,  দুলাভাই মেজবা উদ্দিন অপু ও স্ত্রীর বড় ভাই মনির হোসেনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

মরদেহ উত্তোলনের পর স্বজনদের দেখানো হলে তারা শনাক্ত করেন। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মরদেহটি স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। 

এর আগে স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার মরদেহ মুন্সীগঞ্জে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয় ।  গত ৭ মার্চ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন ইমতিয়াজ। তিনি ঢাকার তেজগাঁও থানার ডমিসাইল এলাকার মোহাম্মদ হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে।  গত ৮ মার্চ তার স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার ঢাকার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির নকশার কাজ করতেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

এদিকে গত ৮ মার্চ সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মরিচের সেতু এলাকা থেকে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহটি আঞ্জুমান মুফিদুলে হস্তান্তর করে পুলিশ। এরপর গত ৯ মার্চ বেওয়ারিশ হিসাবে মরদেহটি মুন্সীগঞ্জ পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়। তবে মরদেহটি নিখোঁজ স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার বলে দাবি করে তার পরিবার।

স্থপতি ইমতিয়াজ নিখোঁজের বিষয়ে গত শুক্রবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার করা হয়। সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার হলে এক ব্যক্তি কমেন্ট করে জানান- সংবাদে প্রচার করা বর্ণনা ও চেহারার একটি মরদেহ সিরাজদিখানে পাওয়া গেছে। পরদিন শনিবার সিরাজদিখান থানায় আসেন ইমতিয়াজের স্বজনরা। সুরতহাল করা সেই মরদেহের চেহারা, পরনের জামা কাপড়ের সঙ্গে নিখোঁজ ইমতিয়াজের মিল ছিল। এতে স্বজনরা দাবি করেন, মুন্সীগঞ্জে দাফন করা মরদেহটিই ইমতিয়াজের। পরে নিখোঁজের স্বজনরা মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান আমলি আদালতে মরদেহ তোলার ব্যাপারে আবেদন করেলে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মানিক দাস সোমবার (২০ মার্চ) মরদেহ তোলার অনুমতি দেন। পরে সেই নির্দেশ মোতাবেক মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জ পৌর কবরস্থান হতে মরদেহ উত্তলন করা হয়।

মরদেহ বুঝে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূইয়ার স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার। তিনি বলেন, যারা আমার সন্তানদের মাথার ওপর থেকে ছায়া সরিয়ে দিয়েছে আমি তাদের বিচার চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি স্বজন হারানোর ব্যথা বোঝেন। আমার তিনটা সন্তানের মাথার ওপর হতে যারা ছায়া সরিয়ে দিয়েছে আমি চিৎকার করে আপনার কাছে তাদের বিচার চাই। কারা এভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করল। আমি বিচার পেলে একটু শান্তি পাব।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়েছে। শুরু থেকেই আইনি প্রক্রিয়ায় স্বজনদের সার্বিকভাবে আমরা সহায়তা করেছি। মুন্সীগঞ্জ আদালত থেকে অনুমতি পাওয়ার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এবং মরদেহ উত্তোলনের সময়ও পুলিশ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে। 

ব.ম শামীম/আরএআর