বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এক উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহজালালের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মাইন উদ্দিন আসাদ নামের এক ঠিকাদার। গত ২১ মার্চ (মঙ্গলবার) বরগুনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। 

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঠিকাদার মাইন উদ্দিন আসাদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেশিরভাগই টেন্ডার জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে পটুয়াখালীর একটি চক্র নিজেদের নামে নিয়ে নিচ্ছে। আর এতে সরাসরি সহযোগিতা করার অভিযোগে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহজালালসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ঠিকাদার মাইন উদ্দিন আসাদ। মামলায় অন্যান্য আসামিরা হলেন- পটুয়াখালী জেলার আখতারুজ্জামান হিরু (৪২), নূরে এলাহী আলম ইভান (২৫), মিজানুর আলম স্বপন মৃধা (৫৫), রিয়াজ উদ্দিন (৫৫) এবং বরগুনার আমতলী উপজেলার এনামুল হক বাদশা (৪০)।

মামলা সূত্রে জানা যায়, বরগুনা ও পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডর শত শত কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারকচক্র। আর এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ রয়েছে খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহজালালের। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনার সদ্য বদলি হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম পান্নার কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। উল্টো প্রভাবশালী ওই প্রতারকচক্রের রোষানলে পরে মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন মাইনউদ্দিন আসাদসহ একাধিক ঠিকাদার। 

মামলার বাদী ঠিকাদার মাঈন উদ্দিন আসাদ জানান, প্রতারকচক্রের নিয়ন্ত্রণাধীন ৫টি লাইসেন্স মেসার্স আবুল কালাম আজাদ, এমডি মিজানুর আলম, মেসার্স মহি উদ্দিন আহম্মেদ, মেসার্স রিয়াজ উদ্দিন এবং মেসার্স আল মামুন এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে বরগুনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিংহভাগ কাজ জাল জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে যেমন রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে তেমনি দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় প্রকৃত ঠিকাদারগণ। 

মাঈন উদ্দিন আসাদ আরো বলেন, বর্তমান সময়ে ইজিপি সিস্টেমে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এই সিস্টেমে দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের যাচাই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয় পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট। এই প্রক্রিয়ায় যার যত বেশি কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট রয়েছে তিনি তত বেশি যোগ্য হিসেবে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকেন। এই চক্রটি নানা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে অসাধু কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদ বানিয়ে বড় বড় কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে ওই চক্রটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের শত শত কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিয়েছেন।   

তিনি বলেন, , রাষ্ট্রীয় অর্থের নজিরবিহীন এ হরিলুট ঠেকাতে চিহ্নিত এ প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যসহ তাদের সহায়তাকারী পানি উন্নয়ন বোর্ড, বরগুনার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) মো. শাহজালালসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আদালত এ অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বরগুনার ডিবি পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করছি আমি ন্যায় বিচার পাব।

এ বিষয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহজালাল বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমনটা করা হয়েছে। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

খান নাঈম/এমএ