যশোরের পূর্ব বারান্দিপাড়া থেকে মণিহার প্রেক্ষাগৃহ হয়ে মুড়লি মোড় পর্যন্ত যশোর-খুলনা মহাসড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ চলছে চার বছর ধরে। এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ২৩ জুন। অথচ তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও ১২৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পটির কাজ হয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশ। 

মেয়াদের বাকি ৩ মাসের মধ্যে অবশিষ্ট ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হবে না বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রকল্পের কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। এই তিন কিলোমিটার সড়ক দিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার যানবাহন দেশের ১৮টি রুটে যাতায়াত করে থাকে। 

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মনিহার থেকে মুড়লি মোড় পর্যন্ত প্যাকেজ-১ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর। কিন্তু গত চার বছরেও এ কাজ শেষ হয়নি। প্রথম দফায় কাজ শেষের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর, দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর, এরপর সর্বশেষ মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৩ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত। স্থানীয়দের অভিযোগ দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হবার পরেও উন্নয়ন কাজে দেখা দিয়েছে ধীরগতি, ফলে স্থানীয়দের কষ্ট লাঘব হচ্ছে না। 

মুড়লির মোড় এলাকার বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বলেন, 'গত চার বছর ধরে এই তিন কিলোমিটার সড়কের কাজ চলছে। এইটুকু সড়ক নির্মাণে এক থেকে দেড় বছরের বেশি সময় লাগার কথা না। এখনো ধীরগতিতে কাজ চলছে। মাঝে মাঝে সড়কে কাজ করতে দেখা যায় আবার মাঝে মাঝে নির্মাণ শ্রমিকদের চোখেই পড়ে না। আমাদের জনজীবনে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়কটি।'

বিল্লাল হোসেন নামে এক পথচারী বলেন, 'সড়কের দুপাশে ড্রেন করার নামে খোঁড়াখুঁড়ি তো লেগেই আছে, সেই সঙ্গে জায়গায় জায়গায় পিচ ঢালছে আবার কোথাও বালু ফেলানো হচ্ছে। গত চার বছর ধরে ধুলোবালির কারণে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বাচ্চাদের নিয়ে এ সড়ক দিয়ে স্কুলে যাওয়া মুশকিল হয়ে গেছে।'

সড়ক নির্মাণের কাজ করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান খান লিমিটেড ও মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড। তৃতীয় দফায় সময় বৃদ্ধি করলেও এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে না বলে এলাকাবাসীর ধারণা। কারণ কাজে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। যদিও বর্তমানে মুড়লি এলাকায় সড়কে পিচ দেওয়ার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে, তবে সড়কের দু-প্রান্ত এখনো বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এখনো খোঁড়াখুঁড়ি চলছে মনিহার বাসস্ট্যান্ডের বিজয়স্তম্ভ এলাকায়।

ইজিবাইকচালক আশরাফ হোসেন বলেন, 'ইজিবাইকে যাত্রীরা উঠতে চায় না। ভাঙাচোরা রাস্তায় ঝাঁকি এবং ধুলোবালিতে তারা অতিষ্ঠ হয়ে যায়। যদিও মুড়লি থেকে আইটি পার্ক পর্যন্ত পিচ দেওয়া হয়েছে, কিছু কিছু জায়গায় এখনো পিচ দিতে বাকি রয়েছে। আইটি পার্ক থেকে বিসিএমসি কলেজ পর্যন্ত রাস্তার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। খুঁড়ে রেখে দেওয়া হয়েছে।'

বাসচালক পারভেজ ইসলাম বলেন, 'গত চার বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি দেখছি, এ কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এই শুনি এ বছর কাজ শেষ আবার কিছুদিন পরে শুনি মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আমরা দ্রুত এ সড়কের নির্মাণকাজ সম্পন্ন দেখতে চাই।'

এবার তৃতীয় দফায় বৃদ্ধি করা মেয়াদের মধ্যে সড়কের কাজ শেষ হবে বলে মনে করছেন যশোরের সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা। 

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা ও নানা সমস্যায় সড়কের কাজ বিঘ্নিত হয়েছে। তবে এবার আর কোন সমস্যা নেই, আগামী ২৩ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রায় ২ কিলোমিটার মতো সড়কের কাজ শেষ হয়েছে, ডিভাইডার ও সড়কের দু-পাশে ড্রেনের কাজ চলছে। আইটি পার্ক থেকে মনিহার ও মনিহার থেকে বিসিএমসি কলেজ পর্যন্ত খোঁড়া হচ্ছে। এটির কাজও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।

এ্যান্টনি দাস অপু/আরকে