আছিমন বেওয়া

‘ছিঁড়া কাপড় পরি আচোং রে বাবা। ভাত নাই কাপড়ও নাই খুব কষ্ট। রোজা ধরছি মনটা কয় একনা (একটু) মাছের তকাই (তরকারি) খাং, একনা (একটু) গোস্তোর তকাই (তরকারি) খাং। মনটা ভালোমন্দ খাবার জন্যে কাউলায়,কিন্তুক খাবার আর পাং না। রোজা খোলার সময় মুড়ির সঙ্গে অন্য কিছু খাবার মন চায়, তাহও হয় না। ট্যাহার জন্যে মুড়ি কিনবার পাই না, আরও অন্য কিছু কেমন করি খাং। আমার এই দুনিয়াত ক্যাইও নাই।’ 

আক্ষেপ নিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের ধরলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মোছা. আছিমন বেওয়া (৭০)। 

তিনি আরও বলেন, ‘স্বামী-সন্তান, বাবা-মা বলতে ক্যাইও নাই মোর, মুই এতিম। পায়ের সমস্যা কাজ করবারও পাং না। মাঝে মধ্যে মানষের বাড়িত কাজ করোং। মানষে কিছু দেয় তাহে দিয়া খ্যায়া না খ্যায়া কোনো রকম বাঁচি আছোং।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আছিমন বেওয়ার বাড়ি পাঁচগাছী ইউনিয়নের পুঁটিমারির চর এলাকায়। বাবার নাম মৃত মাতাম মিয়া। ২৫-৩০ বছর আগে বাবা-মা মারা গেছেন আছিমন বেওয়ার। সে সময় আছিমন বেওয়ার বিয়ে হয় শুলকুর বাজার এলাকায়। তবে সংসার করার ভাগ্য হয়ে উঠেনি তার কপালে। এক বছরের মাথায় আছিমন বেওয়ার স্বামী সামছুল মিয়া তাকে ডিভোর্স দিয়ে বিয়ে করেন অন্য এক নারীকে। পরে কোনো উপায় না পেয়ে চলে আসেন বাবার বাড়িতে। সেই বাবার বাড়িও ধরলা নদীর ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। কোনো জায়গা জমি না থাকার কারণে আছিমন বেওয়ার স্থান হয় শুলকুর বাজার-ভেলুরহাট ওয়াপদা বাঁধে। সেখানেই দীর্ঘ দিন যাবৎ বসবাস করছিলেন তিনি। তার বসবাসের কষ্টে দেখে বছর খানেক আগে তার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরের ব্যবস্থা করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

আছিমন বেওয়া বলেন, ‘মোর দুঃখ কষ্ট দেখি মেম্বাররা এডাই আনি থুছে। এক বছর থাকি এডাই আছোং। সত্য কথা কি ৩-৪ মাস পর পর ১ হাজার ৫শ টেহা পাং ভাতা। তাহে দিয়া কোনো রকমে চলোং। যে জিনিস পাতির দাম এই কয়টা টেহাত কি হয় কন। সব কিনি খাওয়া নাগে। গতকাল একজনের বাড়ি থাকি এক প্লেট ভাত আনছোং, তাহে পাচারি খাইছোং। মোর যদি একটা কিছু ব্যবস্থা করলেন হয়, খুব উপকার হইল হয়।’

ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্বামী পরিত্যক্তা এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন রবি বেওয়া (৮০) নামে এক বৃদ্ধ। তিনি বলেন, ‘দুই বছর থাকি এডাই আছি আমরা। আমারও কাউও নাই। বেটিটা মানষের জমিত একটু কাজ কামাই করে, তাহে দিয়া চলি। আগোত মুই ভিক্ষা করছোং, এলা বয়স হইছি আর বাহির হবার পাং না। যে জিনিস পাতির দাম, খুব কষ্ট হইছে। পাচারি খালি বেগুন দিয়া ভাত খাইছি। মানুষ বলে কত রকমের জিনিস দিয়া রোজা খোলে। আর হামরা রোজা খোলার সময় খালি পানি দিয়া রোজা খোলমো, পরে ভাত খামো।’

জানা গেছে, ধরলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রায় ১৩০টি পরিবারের বসবাস। এখানকার বেশির ভাগ পরিবারেরই একই অবস্থা। 

কুড়িগ্রাম পৌর শহরের আর্দশ জিয়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংস ৬৮০, খাসির মাংস ৮৫০,দেশি মুরগী ৫২০ ও ব্রয়লার মুরগির মাংস ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।  

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভোক্তারা যেন নায্যমূল্যে বাজারে সব ধরনের পণ্য সামগ্রী কিনতে পারে এ জন্যই জেলার বিভিন্ন হাটবাজার আমরা মনিটরিং করছি। কোথাও কোনো অভিযোগ পেলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশিদুল হাসান বলেন, ধরলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে বহুবার সহায়তা করা হয়েছে। এই মুহূর্তে আমার কাছে কোনো কিছু মজুদও নেই। তবে তারা ডিসি স্যারের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করতে পারেন।

জুয়েল রানা/আরএআর