করোনার কারণে এক বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই অবসর সময়টাকে কাজে লাগিয়ে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কলেজ প্রাঙ্গণে তারা সূর্যমুখী ফুলের বাগান করেছেন। এতে একদিকে যেমন কলেজের সৌন্দর্য বেড়েছে পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সুস্থ মানসিকতা বিকাশে এই ফুলের বাগান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া মহাবিদ্যালয় মাঠের এক কোণে হাসছে সূর্যমুখী ফুল। সবুজের মাঝে হলুদ ফুলগুলো এক অন্যরকম সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। তাজা ফুলের ওপর মৌমাছির মধু সংগ্রহের অপরূপ দৃশ্য যে কারও নজর কাড়বে। 

কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, করোনাকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অলস সময়টাকে কাজে লাগাতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবারই প্রথম কলেজ মাঠের পরিত্যাক্ত এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের বাগান করা হয়েছে। প্রতিদিন এই সূর্যমুখী বাগান দেখতে আশপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও সৌন্দর্য পিপাসু মানুষজন আসেন। 

সবুজের মাঝে হলুদ ফুলগুলো এক অন্যরকম সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে

কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুলতানা পারভিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক তিল তিল করে জমানো ভালোবাসা দিয়ে এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কলেজের শিক্ষকদের প্রশান্তি ও শিক্ষার্থীদের সুস্থ মানসিকতা বিকাশের জন্য সূর্যমুখী ফুলের বাগান করা হয়েছে। এই উদ্যোগটি ইতোমধ্যে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ এই বাগান পরিদর্শন করতে আসে। অনেকেই তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সূর্যমুখী ফুলের এমন বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সব মিলিয়ে এই সূর্যমুখী বাগানকে ঘিরে ভালো লাগার একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।

কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আবুল খায়ের পাশা বলেন, এই ফুলের বাগানটি একদিনে হয়নি। অনেক পরিশ্রম করে গড়ে তোলা হয়েছে। শিক্ষকরা যাতে সুন্দর পরিবেশে ক্লাস নিতে পারেন এবং শিক্ষার্থীরা যেন মনোরম পরিবেশে ক্লাস করতে পারে এই উদ্দেশ্যেই সূর্যমুখী ফুলের বাগানটি করা হয়েছে।

সূর্যমুখীর বাগান দেখতে আসা মৌমিতা নামে এক শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের কলেজ মাঠে সুন্দর একটি সূর্যমুখী ফুলের বাগান করা হয়েছে। বিষয়টি ভেবেই ভালো লাগছে। এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশে ঘুরতে কার না মন চায়। এমন উদ্যোগের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। 

প্রতিদিন সূর্যমুখী ফুল দেখতে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আসছেন

এদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলছে স্থানীয় প্রশাসন। বাগান পরিদর্শনে এসে ফুলছড়ি উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আবু রায়হান দোলন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি সত্যিই একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও সূর্যমুখী ফুলের বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকরা নিজেরাই পরিচর্যা করে বাগানটিকে চমৎকার করে গড়ে তুলেছেন। সব মিলিয়ে এটি একটি ভালো কাজ। উপজেলা প্রশাসন এমন কাজকে সমর্থন করে। 

তিনি আরও বলেন, দৃষ্টিনন্দন বাগানটি অনেকের কাছে এখন অনুকরণীয় হবে। উপজেলার সকল স্কুল ও কলেজে যদি বাগান করার সুযোগ থাকে তাহলে অবশ্যই করা যেতে পারে।

কঞ্চিপাড়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এটিএম রাশেদুজ্জামান রোকন ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাকালে কলেজ বন্ধ থাকায় মাঠের এক কোনে এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষের সিদ্ধান্ত নিই। পরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে সূর্যমুখী ফুলের বাগান পরিপূর্ণতা লাভ করে। এই বাগানটি কলেজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। প্রতিদিন সূর্যমুখী ফুল দেখতে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আমাদের কলেজে আসছেন। 

রিপন আকন্দ/আরএআর