সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতায় আহছানিয়া মিশনের উদ্যোগে দেশের বৃহত্তম ইফতারের আয়োজন করা হয় বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধক আলহাজ খান বাহাদুর আহসানউল্লাহর জন্মভূমি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা গ্রামে। তিনি ১৯৩৫ সালের ১৫ মার্চ নলতা আহছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। আহছানিয়া মিশনের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠা লগ্ন দিকেই রমজান মাসে ক্ষুদ্র পরিসরে ইফতারের আয়োজন করা হত। পরবর্তীতে সময়ের পরিক্রমায় ওই আয়োজনের প্রসার বড় হতে থাকে। খান বাহাদুর আহসানউল্লাহর শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভক্তরা প্রতি বছর এই আয়োজন চলমান রেখেছেন, যা বর্তমান সময়ে দেশের সর্ববৃহৎ ইফতার আয়োজনের স্থান করে নিয়েছে। ইতিপূর্বে এই নলতা আহছানিয়া মিশনের উদ্যোগে একসঙ্গে ১০ হাজার রোজাদারকে ইফতার করানো হত তবে করোনার পর থেকে সাত হাজার রোজাদারকে একসঙ্গে ইফতার করানো হয়। বাকি তিন হাজার রোজাদারের ইফতার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এতিমখানা, মসজিদ ও বিভিন্ন অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়।

ফরহাদ হোসেন নামে কর্মরত এক বাবুর্চি ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রতিদিন ভোরবেলা থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু হয়। সমস্ত রান্না শেষ করতে বিকেল ৫টার মতো বেজে যায়।

শাহরিয়ার পারভেজ নামে স্থানীয় এক যুবক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি রমজান মাসে এখানে ইফতারের বড় আয়োজন হয়। ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে লোকজন আসে। এখানকার বাসিন্দা হিসেবে আমি গর্ববোধ করি।

লালমনিরহাট থেকে আসা একজন মুসল্লি বলেন, লোকমুখে শুনেছি এখানে একসঙ্গে কয়েক হাজার মানুষ ইফতার করেন। বাস্তবে এসে দেখছি আসলেই তাই। এখানে রোজ ছয় থেকে সাত হাজার মানুষ একত্রিত হয়ে ইফতার করেন। এমন আয়োজন দেখে অভিভূত হয়েছি।

স্বেচ্ছাসেবকদের নেতৃত্ব প্রদানকারী তারেক হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি বছর রমজানে মাসব্যাপী এখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে থাকি। আমার পরিচালনায় তিন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিনা পারিশ্রমিকে রোজাদারদের সম্মানার্থে কাজ করেন। কোনোরকম বিশৃঙ্খলা ছাড়া সুষ্ঠুভাবে ইফতার বণ্টন করা হয়। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোজাদারদের সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে ইফতার করানো হয়।

নলতা আহছানিয়া মিশনের এডহক কমিটির সদস্য আবুল ফজল ঢাকা পোস্টকে জানান, ১৯৩৫ সালে অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ এই মিশনটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে ক্ষুদ্র পরিসরে রমজান মাসের এই আয়োজন শুরু হয় যা পরবর্তীতে বৃহৎ পরিসরে হতে শুরু করে। এখানে দশ হাজার রোজাদারকে একসঙ্গে ইফতার করানো হত। করোনা পরবর্তী সময়ে সাত হাজার রোজাদারের ইফতার প্রস্তুত করা হয় এখানে। বাকি তিন হাজার রোজাদারের ইফতার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন মসজিদ, এতিমখানাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। বিভিন্ন মানুষের পাঠানো টাকা থেকে রমজানে মাসব্যাপী এই ইফতার কার্যক্রম চলে থাকে। জানা মতে, এত বড় আয়োজন দেশের আর কোথাও হয় না।

সোহাগ হোসেন/এমজেইউ