হামরা (আমরা) গরিব মানুষ, হামার আবার খাওয়া। স্বামী বাঁচি (বেঁচে) থাকতে ভালোমন্দ খাচি (খেয়েছি)। এখন সে সাধ্য নাই। প্রথম রোজাত (রোজায়) ভাতে পানি দিয়ে ইফতারি করছি। পরের দিন লবণ দিয়্যা ভাত মাখি খাচি। আজ যে কি দিয়্যা (দিয়ে) ইফতার করমু তা বলতে পারছি না।

বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলেন, গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের ত্রিমোহনী আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিবন্ধী মেয়ের ঘরে আশ্রয় নেওয়া হালিমা বেওয়া (৭২)।

তিনি বলেন, বয়স হয়েছে কাম-কাজ করবার পাম না, প্রতিবন্ধী ছোলটা (মেয়ে) চায়া চিমটিয়া (সাহায্য করে) যেকনা আনে সবাই মিলিয়া ভাগ করে খাই। মাঝে মাঝে সবাইকে এক সাথে উপোষ থাকতে হয়।

তিনি আরও বলেন, কেউ আমাদের দিকে দেখে না। চেয়ারম্যান, মেম্বর কেউ না। মাঝে সাঝে এসে শুধু আশ্বাস দেয়। মনটা ভালো মন্দ খাবার চায়, তা পাবো কুনটি (কোথায়) বাবা। গত বছর কোরবানির ঈদে একটু গরুর গোস্ত খেয়েছিলাম। এক বছর হতে চললো আর মুখে পড়েনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হালিমা বেগমের বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোলায়ালী ইউনিয়নের পশ্চিম পেয়ারাপুর গ্রামে। স্বামী মারা গেছে অন্তত ২০ বছর আগে। পরিবারে তিন মেয়ে এক ছেলেসহ মোট চার জন। ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়েছে। দুই মেয়েরও বিয়ে হয়ে তারাও স্বামীর সংসারে। হালিমা বেওয়ার বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী আকলিমা বেগমের সঙ্গে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে থাকেন। প্রতিবন্ধী মেয়েটারও বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বেশিদিন সংসার হয়নি। সংসারে একটা মেয়ে সন্তান জন্ম হওয়ার কিছুদিন পর স্বামী রেখে চলে গেছে। এখন ত্রিমোহনী আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে তিনজন মিলে থাকেন। সংসারে আয় বলতে ওই প্রতিবন্ধী মেয়েটা। সারাদিন হুইল চেয়ারে শহরের মধ্যে সাহায্য চেয়ে বেড়ান। দিনশেষে যা হয় তা দিয়ে চলেন আকলিমা ও হালিমারা।

শুধু হালিমা বেওয়া নয়, এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে বেশির ভাগ মানুষই হতদরিদ্র। প্রত্যেকই দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। এছাড়াও এখানে অন্তত ১০ জন প্রতিবন্ধী রয়েছে যাদের অন্যের সাহায্য নিয়ে জীবন চলতে হয়। এখানকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষগুলো সরকারি সাহায্যের দাবি জানিয়েছেন।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজানে আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ অনুযায়ী সাহায্য সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। এ বছর এখনও শুরু হয়নি। খোঁজ নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে যারা একেবারেই গরিব ও চলতে পারে না তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।

তিনি সরকারি সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াও সমাজের বিত্তবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অসহায় ও গরিব মানুষদের পাশে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

রিপন আকন্দ/এমএএস