‘আমার কেউ নেই বাবা, এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে দৈনিক ৮০ টাকা মজুরিতে চায়ের দোকানে কাজ করি আমি। স্বামী-সন্তান সব হারিয়েছি। শ্বশুর বাড়ির লোকেরা স্বামীর জায়গাটুকুও দেয়নি। দিশেহারা হয়ে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। হার্টের চিকিৎসা করাব বলে চায়ের দোকানে কাজ করি। একটা চালের কার্ডের জন্য জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনেক দৌড়াইছি, তবুও পাইনি।’ 

চায়ের কাপ ধুতে ধুতে ছলছল চোখে এভাবে নিজের সংগ্রামী জীবনের কথা বলছিলেন ৫৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা ফতেমা বেগম। তিনি বর্তমানে যশোর শহরতলীর বাহাদুরপুর মেহগনিতলা এলাকায় তার বোন আসমা ওরফে সবেদার বাড়িতে বসবাস করেন। প্রতিদিন ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যশোর শহরে এসে লালদিঘির পাড়ে রুস্তমের চায়ের দোকানে কাজ করেন তিনি।

ফতেমা বেগম বলেন, সন্তান পেটে থাকতে, আমার স্বামী আব্দুর রহমান মারা গেছেন। আমার স্বামী আমাকে নিয়ে খুলনার রুপসা এলাকার একটি বস্তিতে থাকতো। বস্তির পাশেই তার সামান্য ভিটেমাটি ছিল। স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আমাকে ওই জায়গাটুকু আর দেয়নি। অসহায় হয়ে আমি আশ্রয় নিয়েছি যশোর শহরতলীর বাহাদুরপুরে আমার বোনের বাড়িতে। আমার ছেলেটা জন্মের ৯ দিনের মাথায় মারা যায়। স্বামী-সন্তান হারিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমি দিশেহারা জীবন পার করছি।'

ফতেমা বেগম চোখ মুছতে মুছতে বলেন, আমার হার্টের সমস্যা। ডাক্তার দেখানোর জন্য কয়েক বছর ধরে এভাবে পরের চায়ের দোকানে কাজ করি। আজ পর্যন্ত ভালো করে ডাক্তার দেখাতে পারিনি। সারাদিন চায়ের দোকানে কাজ করে ৮০ টাকা মুজরি নিয়ে বাড়িতে যাই। ৮০ টাকা নিয়ে বাড়িতে বোনের হাতে দেই, আমি অসুস্থ তাই বাজার করতে পারি না। এই ৮০ টাকায় চাল কিনব নাকি ওষুধ কিনব বলেন? ফতেমা বেগম বলেন, একটা চালের কার্ডের জন্য মেম্বার জনপ্রতিনিধিদের কাছে গেছি। সবাই আজ না কাল আসেন বলে ঘুরায়।'

এ বিষয়ে নওয়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির তুহিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, 'আপাতত কোনো চালের কার্ড আসেনি। ওই বৃদ্ধাকে যোগাযোগ রাখতে বলবেন, কার্ড আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।'

এ্যান্টনি দাস অপু/আরকে