বিকেল হলেই পাখির কলতানে মুখর হয় থানা প্রাঙ্গন। গাছে গাছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির আনোগোনা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আহারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে, সুবিধাজনক সময়ে নীড়ে ফিরে। এমন হরেক রকম পাখির আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে থানার গাছগাছালি। পুলিশি নিরাপত্তা বলয়ে থাকা সবুজ গাছগাছালিতে ভরা নিরাপদ এই পরিবেশে এসব পাখি শিকারিমুক্ত। এসব পাখির সুরক্ষায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি উদ্যোগ।

পাখিদের এই নিরাপদ আবাসস্থল রংপুরের গঙ্গাচড়া মডেল থানা। গাছগাছালিতে ভরা এই থানা চত্বরে দোয়েল, কোয়েল, ময়না, টিয়া, ঘুঘু, বকসহ বিভিন্ন দেশীয় পাখি বাসা বেঁধেছে। আর পাখিদের অতিথির মর্যাদায় রাখার জন্য থানার শতাধিকের বেশি গাছে রাখা হয়েছে মাটির কলস। কেউ যাতে পাখিদের ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য থানায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সার্বক্ষণিক নজর রাখতে দেওয়া রয়েছে বাড়তি নির্দেশনা।

জানা গেছে, তিস্তা ও ঘাঘট নদী বেষ্টিত গঙ্গাচড়া উপজেলায় রয়েছে কয়েকটি বড় জলাশয়। এসব মুক্ত জলমহালে মাছ, ব্যাঙ এবং শামুকসহ নানা প্রাকৃতিক খাবার রয়েছে। যা পশুপাখি ও পোকামাকড়ের জন্য সবচেয়ে বেশি পছন্দের খাবার। এ কারণে এসব জলাশয়ে পাখির অবাধ বিচরণ চোখে পড়ার মতো। আকাশের বুকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির ছুটোছুটি, দলবদ্ধ খাবার সংগ্রহ ও নীড়ে ফেরার দৃশ্য যে কারও মন কাড়বে। এসব পাখির বেশির ভাগ কয়েক বছর ধরে গঙ্গাচড়া মডেল থানা চত্বরের গাছগাছালিতে আবাসস্থল গড়েছে। থানার ভেতরের পেছনের দিকে আম, জাম, কাঁঠাল মেহগনিসহ বিভিন্ন ধরনের গাছের ডালে ডালে এসব পাখি সংসার বেধেছে।

থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মমতাজুল হক বলেন, প্রতিদিন ডিউটির পাশাপাশি পাখিদের যাতে কেউ ক্ষতি না করতে পারে, সেজন্য ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাখি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই পাখি সুরক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

গঙ্গাচড়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল হোসেন জানান, পাখির কিচিরমিচির শব্দে থানার ভেতরে অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন বিকেলের পর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসে। দোয়েল, কোয়েল, বকসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখি সারাদিন উপজেলার নদী, খাল, বিল চষে বেড়ায়। এসব পাখিদেরই একটি অংশ নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে থানার ভেতরের গাছগুলোকে বেছে নিয়েছে।

ওসি আরও বলেন, একসময় এলাকার বিভিন্ন বাড়ির গাছে পাখি বাসা করে থাকতো। কিন্তু পাখি শিকারিদের কারণে সেটা এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। আমরা খেয়াল করেছি, থানার ভেতরে গাছে গাছে পাখিদের আনাগোনা। তারা হয়তো এ জায়গাটাকে নিরাপদ মনে করছে। প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাখিগুলো খাবারের সন্ধানে নদীসহ বিভিন্ন জলাশয়ে চলে যায়। আবার সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে ফিরে আসে। আমরা এসব পাখির সুরক্ষা ও অভয়ারণ্য সৃষ্টির জন্য থানা প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস