ময়মনসিংহের ত্রিশালে কাশেম আলী নামে এক কৃষকের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে দুটি বসতঘর ও একটি গোয়ালঘর। একইসঙ্গে পুড়ে মারা গেছে তিনটি গরু। এমন খবর জানতে পেরে অসহায় ওই কৃষক পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তরুণ সংগীত শিল্পী ও সমাজকর্মী তাসরিফ খান। 

মানবিক ব্যক্তিদের কাছে সহায়তা কামনা করে ফেসবুকে লাইভ করেন তাসরিফ। সেই লাইভের ২২ ঘণ্টার মধ্যে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছেন তিনি। এরপর গত মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাতে কাশেম আলীর বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন দুটি দোচালা ঘর তৈরির সরঞ্জাম। 

এর আগে গত রোববার (২৬ মার্চ) রাত ৯টার দিকে উপজেলার কানিহারী ইউনিয়নের বালিদিয়া গ্রামের কৃষক কাশেম আলীর বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে সব কিছু হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে আট সদস্যের এ পরিবারটি। স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে পর দিন ফেসবুক লাইভে আসেন তাসরিফ। 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কাশেম আলী বলেন, তাসরিফ আমাদের জন্য দুটি ঘর তৈরি, নগদ ১০ হাজার টাকা, কিছু পোষাক ও একটি গরু কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। শুক্রবার হাট থেকে গরু ও টিন কেনা হবে। ঘরের কাজ চলছে, দুই দিন পরই আমরা ঘরে উঠতে পারবো। তাসরিফ আমাদের জন্য আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছেন।

বখাটের হুমকি ও উদ্ভট পরিস্থিতির মুখে তাসরিফ 

এদিকে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে সহায়তা করতে গিয়ে উদ্ভট পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে তাসরিফ খানকে। স্থানীয় নেতা পরিচয় দেওয়া শুভ (১৬) নামে এক বখাটের কাছ থেকে হুমকি পান ‘কুঁড়েঘর’ ব্যান্ডের এই শিল্পী। তাকে সময় দিতে হবে ও কথা শুনতে হবে, নয়তো চলে যেতে হবে বলে হুমকি দেয় শুভ। স্থানীয় কালিরবাজার এলাকায় পৌঁছালে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশের সহায়তা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের বাড়িতে পৌঁছান তাসরিফ। 

ফেসবুক লাইভে তাসরিফ খান হুমকি দেওয়া ওই বখাটের ছবি দেখিয়ে বলেন, লালশার্ট পরা এই ছেলেটা সন্ধ্যায় আমাদের সাথে যা তা ব্যবহার করলো। ছেলেটার নাম শুভ। ত্রিশালের এই ছেলেটা কত বড় নেতা আমার জানা নেই, তবে আজ কাশেম চাচাকে সাহায্য করতে গিয়ে ত্রিশালের কালির বাজার এলাকায় আমি গাড়িতে বসে মুখের ব্যায়ামগুলো করছিলাম। ছেলেটা তার বন্ধুদের নিয়ে ছবি তুলতে আসে। আমার ছোট ভাই তানজীব গাড়ি থেকে নেমে তাকে বুঝিয়ে বলতে যায়, এখন ছবি তোলা যাবে না, ভাইয়া ব্যায়াম (মুখের সমস্যায়) করছে। এই কথা শুনে ছেলেটা তানজীবকে ধমকের স্বরে বলে, ‘তার এলাকায় থাকলে নাকি তার কথা মানতেই হবে, ছবি তুলতেই হবে, এমনকি সে যা বলে তাই করতে হবে, অন্যথায় আমরা যেন এই এলাকা থেকে চলে যাই।’

এই কথাগুলো জানতে পেরে এক মুহূর্তের জন্য ভেবেছিলাম আমি চলেই যাই। যাই হোক, পরে আমি থানায় ফোন করে পুলিশের সহায়তা নিয়ে ওই এলাকায় প্রবেশ করি এবং কাশেম চাচাকে তার প্রাপ্য ঘর বুঝিয়ে দিয়ে আসি।

ত্রিশাল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক বিল্লাল হোসেন জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এক পরিবারকে সহযোগিতা করতে এসে নিরাপত্তাহীনতায় কথা জানিয়ে তাসরিফ আমাদের সহযোগিতা চাওয়ায় ওসি স্যারের নির্দেশে আমরা তাদের নিরাপত্তা দেই। তবে এ বিষয়ে তিনি কোনো অভিযোগ দেননি।

উবায়দুল হক/আরএআর