চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীতে গত এক সপ্তাহে প্রায় কয়েক টন দেশি চেউয়া মাছ ও পোনাসহ ছোট বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠছে। এতে পচা মাছের দুর্গন্ধে নদীর পাড়ের লোকজনের গোসলসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।

স্থানীয় মৎস্য বিভাগের দাবি, আশপাশের শিল্পকারখানাগুলো নদীর পানিতে বর্জ্য ফেলছে। এছাড়া স্থানীয় লোকজনও হাটবাজার ও বাসাবাড়ির আবর্জনা নদীতে ফেলছেন। এতে পানি দূষিত হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) মেঘনা নদীর পাশের ষাটনল ইউনিয়নের জেলেপাড়া, বাবু বাজার, সটাকী, বাহাদুরপুর এলাকায় দেখা যায় পানিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পানি নষ্ট হয়ে কালো রং ধারণ করেছে।

মহাবীর বর্মন নামের এক জেলে জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের কারখানার পরিত্যক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পানি কালো রং ধারণ করেছে। বিষাক্ত পানিতে টিকতে না পেরে মাছ মরে ভেসে উঠছে।

সুখরঞ্জন বর্মন, ইমাম হোসেন, প্রদ্বীপ বর্মন, সুভাষ বর্মনসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, কারখানার দূষিত বর্জ্য ফেলার কারণে মতলব উত্তর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ব্যাপক হারে মারা যাচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে শতশত লোকজন মৃত মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম বলেন, নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের কারখানার পরিত্যক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে মেঘনা নদীতে এরকম মাঝেমধ্যে হয়। সেই বর্জ্যের কেমিক্যালের প্রভাব এখানের নদীর মাছের উপর পড়ে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানির স্রোতে বর্জ্যযুক্ত পানি বেশি আসার কারণে মাছগুলো হয়ত মারা গেছে।  তবে মাছ মরার পরিমাণ এবার একটু বেশি। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং পানি পরীক্ষা করেছি। মাছের জন্য উপযুক্ত বিশেষ করে অক্সিজেন, পিএইচ ও অ্যামোনিয়া উপাদান স্বাভাবিক আছে। কোন কারণে মাছগুলো মারা গেছে বিষয়টি বুঝা যাচ্ছে না। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।

তিনি আরও বলেন, মাছগুলো মরে ভেসে গেছে এবং নদীর পাড়ে জমাট হয়ে পচে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মরে যাওয়া মাছের মধ্যে রয়েছে কাকরা, ভেলে মাছ, পোয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এছাড়া নদীর তলদেশের মাছও রয়েছে। এক্ষেত্রে নদীর তলদেশের মাছের পরিমাণই একটু বেশি।

চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। এখানে তেমন শিল্পকারখানা নেই। পানি দূষণ বা অন্য কোনো কারণে মাছ মারা যাচ্ছে কি না খতিয়ে দেখব। আগামী রোববার (২ এপ্রিল) সরেজমিনে পরিদর্শন করে পানির নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে।

আনোয়ারুল হক/এমজেইউ