রমজানে সেদ্ধ আলু দিয়ে ইফতার করা জরিনার পরিবারের পাশে খাদ্য সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে তিনটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। চার দিন আগেও জরিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের পাতে ইফতার-সেহরিতে ঠিক মতো খাবার জোটেনি। ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশের পর এখন সেই জরিনার পরিবারে অন্তত তিন মাসের খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। 

গত ২৮ মার্চ ‘দুই দিন ধরে ইফতারে সেদ্ধ আলু খাচ্ছি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট। এ সংবাদটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্প্রেড স্মাইলস, ফুড ব্যাংক ফাউন্ডেশন ও অদম্য বাংলাদেশের সদস্যদের নজরে আসে। পরে তারা জরিনার পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে তার বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেন।

এদিকে গত বুধবার (২৯ মার্চ) জরিনার বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের হাতে এক মাসের খাবার পৌঁছে দেন স্প্রেড স্মাইলস। এসবের মধ্যে ২৫ কেজি চাল, আড়াই কেজি মসুর ডাল, পাঁচ কেজি ছোলা, ৫ লিটার তেল, আধা কেজি খেজুর, দুটি মুরগি এবং এক কেজি করে চিনি ও লবণ রয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্প্রেড স্মাইলসের সভাপতি আফ্রিদা জাহিন বলেন, আমি প্রায়ই ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত মানবিক রিপোর্টগুলো পড়ে থাকি। সেদ্ধ আলু দিয়ে ইফতার খাওয়ার রিপোর্টটি নজরে আসলে আমরা ওই পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে বাড়িতে গিয়ে পুরো এক মাসের খাবার পৌঁছে দিয়েছি। 

এরপর দিন বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) প্রতিদিনের বাংলাদেশের পাঠক ফোরাম অদম্য বাংলাদেশ থেকেও পুরো এক মাসের খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়। এ ব্যাপারে প্রতিদিনের বাংলাদেশের রংপুর ব্যুরো প্রধান সাংবাদিক মেরিনা লাভলী বলেন, আমাদের চার পাশে এমন অনেক অসহায় মানুষ রয়েছে। আমরা তাদেরকে আল খায়ের ফাউন্ডেশন এবং অদম্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদান করে আসছি। জরিনাসহ এমন অসহায়, দুস্থ ও দরিদ্র ছয় শতাধিক পরিবারকে আমরা খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। 

অদম্য বাংলাদেশ থেকে অসহায় জরিনার পরিবারকে ১৫ কেজি চাল, দুই কেজি আটা, দুই লিটার তেল, এক কেজি করে মসুরের ডাল, ছোলা, চিনি, লবণসহ গুড়া দুধের প্যাকেট, খেজুর, হলুদ-মরিচের গুড়া ও শরবতের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে।

এদিকে শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিকেলে জরিনার বাড়িতে যান মানবিক পুলিশ সদস্য শেখ মোস্তাফিজুর রহমান। সেখানে ওই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি কথা বলে তাদের হাতে খাদ্য সহায়তা তুলে দেন। 

রংপুর সদর কোর্টের সহকারী টাউন সাব-ইন্সপেক্টর (এটিএসআই) হিসেবে কর্মরত শেখ মোস্তাফিজুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে সমাজের অবহেলিত, সুবিধা বঞ্চিত, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি পাঁচ বছর আগে ফুড ব্যাংক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। 

এটিএসআই শেখ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ধরনের মানবিক কাজ করতে আমার ভালো লাগে। আত্মার মধ্যে অন্য রকম শান্তি পাই। ঢাকা পোস্টে ওই সংবাদটি দেখার পর আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী ১০ কেজি চাল,  দুই কেজি আলু, এক লিটার তেল, এক কেজি ডাল, এক কেজি চিনি, এক কেজি পেঁয়াজ, এক কেজি খেজুর, আধা কেজি রসুন, আধা কেজি মরিচ, দুধ এক প্যাকেট, সেমাই দুই প্যাকেট এবং দুটি মুরগি দিয়ে সহায়তার চেষ্টা করেছি। 

মানবিক এই পুলিশ সদস্য আরও বলেন, আমি আমার নিজ উদ্যোগে অবসর সময়ে সামর্থ্য অনুযায়ী এসব মানুষকে সহায়তার চেষ্টা করছি। আমার মনে হয় আমরা সবাই যদি সবার জায়গা থেকে একটু একটু এগিয়ে আসি, তাহলে সমাজে অসহায়-গরিব মানুষেরা দুঃখ-কষ্ট ভুলে একটু ভালো অবস্থায় ফিরতে পারবে। 

এ সময় আবেগ আপ্লুত হন জরিনা ও তার  পরিবারের সদস্যরা। অশ্রু সিক্ত চোখে জরিনা বেগম বলেন, আল্লাহর রহমতে এই তিন দিনে অনেক খাবার পাইছি। ইফতার-সেহরির খাবারের জন্য আর কষ্ট হবে না। যা পেয়েছি দুই-তিন মাস সংসার চলবে। আমি খুব খুশি, দোয়া করা ছাড়া আমার মতো গরিবের তো আর কিছু নেই। আমি শুধু আপনাদের জন্য দোয়া করব।

এদিকে সংবাদ প্রকাশের পর অসহায় ওই পরিবারের পাশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং উপজেলা প্রশাসন থেকেও দাঁড়ানোর কথা জানানো হয়েছে বলে জানান জরিনা বেগম। 

প্রসঙ্গত, পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী জরিনা বেগম রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের গুঞ্জরখাঁ গ্রামের বাসিন্দা। তার স্বামী আবুল কালাম ওরফে কাইল্ল্যা পেশায় দিনমজুর। উপার্জনক্ষম বড় ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ায় পরিবারের সাত সদস্যের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দিতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। অসুস্থ শরীরে স্বামী একদিন কাজে না গেলে জরিনার পরিবারে ঠিক মতো রান্না হয় না। রমজানের শুরুতে দুই দিন সেদ্ধ আলু দিয়ে ইফতার করেন তার পরিবারের সদস্যরা। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর