র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে রাজশাহীর সচেতন নাগরিকরা। একই সঙ্গে যুগ্ম সচিব এনামুল হকের বিরুদ্ধেও তদন্ত দাবি করা হয়েছে। 

শনিবার (১ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নে ‘রাজশাহীর সচেতন নাগরিকবৃন্দের’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য দেন লেখক ও হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী। 
 
তিনি বলেন, সহজ কথা হলো একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। উনি নওগাঁর ইএনও বা এসিল্যান্ডকে বললেই তো তার (জেসমিন) বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হতো। সেটা উনি (যুগ্ম সচিব) না করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে র‌্যাবকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন। এটা রহস্যময়। এটা নিঃসন্দেহে রহস্যময়। আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। একটা বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলে তার (যুগ্ম সচিব) বিরুদ্ধেও তদন্ত হবে। স্থানীয় লোকজন ও একজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, জেসমিনকে আটকের সময় যুগ্ম সচিব ঘটনাস্থলে ছিলেন। পরে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি বিরিয়ানি খেতে এসেছি।
 
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়- জেসমিনের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। একজন নাগরিক যদি অপরাধের সঙ্গেও সম্পৃক্ত হন, তার বিচার পাওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। সেখানে কোনো রকম আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়াই একজন নাগরিককে সরকারি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মৌখিক কথায় এবং তার উপস্থিতিতে উঠিয়ে নিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল, যার পরিণতিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এটি নিঃসন্দেহে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এছাড়া নিহত জেসমিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে অনুসন্ধানকারী দলের ধারণা জন্মেছে যে, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তারা ভীত সন্ত্রস্ত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
 
বিশিষ্টজনদের মতে, জেসমিনের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার না দিয়ে সরাসরি তুলে নিয়ে যাওয়া অপহরণের শামিল। পরে সরকারি বাহিনীর হেফাজতে তার মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত রহস্যময়। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমেই এর পেছনের মূল কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হবে। যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার একজন ব্যক্তির এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার যে বর্ণনা ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তার যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। কেননা নিহত জেসমিনও প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী ছিলেন।
 
সুতরাং জেসমিন অপরাধ করে থাকলে খুব সহজেই বিভাগীয় পদক্ষেপ নেয়া যেত। তা না করে র‍্যাবকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যবহার করে একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা যে ভূমিকা নিয়েছেন বলে প্রকাশিত হয়েছে তা আইনের ব্যত্যয় এবং অত্যন্ত দুঃখজনক। এজন্য রাজশাহীর বিশিষ্টজনরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনার যথাযথ কারণ অনুসন্ধান এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। 
 
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সম্প্রতি র‍্যাবের হেফাজতে নিহত সুলতানা জেসমিনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও ঘটনার সরেজমিন অনুসন্ধান করে রাজশাহীর বিশিষ্ট নাগরিকদের একটি দল। তারা শুক্রবার (৩১ মার্চ) নওগাঁ সফর করেন।
 
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন রাজশাহীর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত বেগ, যুব অধিকার পরিষদ রাজশাহীর নেতা ওমর ফারুক। 
 
প্রসঙ্গত, সুলতানা জেসমিন গত ২২ মার্চ সকালে অফিসে যাওয়ার পথে শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে তাকে র‌্যাব আটক করে। ওইদিন দুপুর ১২টার পর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন সুলতানা নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ সকালে তিনি মারা যান। পর দিন ২৫ মার্চ রামেকে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে নওগাঁ সরকারি কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারী ছিলেন। 

শাহিনুল আশিক/আরএআর