ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক সন্ধ্যা ৬টা বেজে ১৩ মিনিট। সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন চত্বরের পাকা রাস্তার ওপরে চট বিছানো সারি সারি বসার জায়গা। কিছু জায়গায় কেউ কেউ বসেও রয়েছেন। আবার কিছু কিছু জায়গা এখনো খালি। যারা বসেছেন তাদের কেউ ভিক্ষুক, কেউ রিকশাচালক, কেউবা আবার পথচারী। বাদ যায়নি আশপাশে ঘুরে বেড়ানো বা স্টেশনে রাত কাটানো ছিন্নমূল মানুষেরাও।

এভাবেই সেখানে বসবেন ১৫০ থেকে ২০০ জন অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষ। সারাদিন রোজা থাকার পর একসঙ্গে করবেন ইফতার। দিন শেষে তাদের তৃপ্তির ঢেকুরেই যেন এক ঝাঁক তরুণের প্রশান্তি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সংযুক্ত থাকা কিছু বন্ধু ও স্থানীয় কিছু মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ জন ভিক্ষুক, পথচারী, রিকশাচালক, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের ইফতার করান বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সদস্য মো. শামীম রেজা ও তার দল। কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীকে সঙ্গে নিয়ে ‘মানব সেবাই স্বপ্ন গ্রুপ’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের ব্যানারে মাসব্যাপী এই ইফতারের আয়োজন করে চলেছেন তিনি।

ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্ত। ইফতার প্রস্তুত করে সবার কাছে পৌঁছে দিতে ব্যস্ত শামীম ও তার দল। এ কাজে শামীম রেজাকে শুরু থেকেই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সহযোগিতা করে আসছেন আখতারুজ্জামান আক্তার, ইসমাইল হোসেন, আব্দুল মুমিন কলি, আলমগীর হোসেন, আব্দুল আলিম, সোয়েব মোহাম্মদ, হাবিল আহমেদ, ইউসুফ আলীসহ গ্রুপের অস্থায়ী কিছু সদস্য।

অন্যান্য দিন ইফতারিতে ছোলা, পেঁয়াজু, জিলাপি, তরমুজ, পেয়ারা, খেজুর, কলা, মুড়ি ও শসা থাকলেও আজ শনিবার (০১ এপ্রিল) ছিল গরুর মাংসের তেহারি।

স্বেচ্ছাসেবক ইসমাইল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা আসলে অন্যরকম একটা অনুভূতি। যখন একজন অন্ধ বা অসহায় মানুষ ইফতারে বসে আল্লাহর কাছে মোনাজাত ধরে দোয়া করেন, তখনকার অনুভূতিটা প্রকাশ করার মতো না। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য, অসহায়দের পাশে থাকা। দিনশেষে রোজদারদের এই তৃপ্তিই আমাদের ভালো লাগা।

১৭ বছরের প্রতিবন্ধী মেয়ে খাদিজাকে নিয়ে ভিক্ষা করে সংসার চালান উজ্জ্বল। তিনি প্রতিদিনের মতো আজকেও প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে ইফতার করতে এসেছেন এখানে। নিজে হাতে প্রতিবন্ধী মেয়ে খাদিজার মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে উজ্জ্বল। বাবার হাতে খাবার পাওয়ার পর খাদিজার হাসিও যেন ভুবন ভোলানো।

এ নিয়ে উজ্জ্বল ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে এখানে-ওখানে ভিক্ষা করে বেড়াই। আর ইফতারের সময় হলেই চলে আসি এখানে। মেয়েকে নিয়ে এখানে বসেই ইফতার করি। তাদের এই উদ্যোগের কারণে আমরা অন্তত এখানে ইফতারটা শান্তি মতো করি। আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দোয়া করি।

মাসব্যাপী এই ইফতারের উদ্যোগ নেওয়া পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্য শামীম রেজা ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে কোনো বিষয়েই গরিব ও অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। আমরা ইতোমধ্যেই প্রায় দুই হাজার কোরআন শরীফ বিতরণ করেছি। অন্যান্য বছরে আমরা মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ইফতার করানোর ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু এবার রমজান আসার আগেই চিন্তা করলাম অনেক ভিক্ষুক, পথচারী ও অসহায় মানুষ আছে, যাদের ইফতার করার জায়গা নেই। তখন ভাবলাম, তাদের জন্য যদি প্রতিদিন উন্মুক্ত ইফতারের আয়োজন করতে পারি তাহলে খারাপ হয় না। এতে অন্তত তারা সারাদিন রোজা থাকার পর একটু ভালোভাবে ইফতার করতে পারবেন। সেই ভাবনা থেকেই এই পদক্ষেপ।

শুভ কুমার/এবিএস