পুরোনো টিনের ঘরটা কোন রকমে টিকে আছে। ভাঙা বেড়া মেরামত করতে না পেরে এক পাশ ঘিরেছেন জাল দিয়ে। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি পড়ে চাল দিয়ে। দীর্ঘ দিন মেরামতের অভাবে চৌচালা ঘরটির ভেঙে পড়ার উপক্রম। ঘরে আছে শুধু একটি বিছানা। এক ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে সেখানেই বসবাস রাজ্জাক খানের (৫৩)। 

রাজ্জাকের বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ খানপুর গ্রামে। অনেক না থাকলেও অভাব ছিল না তার ছোট্ট সংসারে। রাজমিস্ত্রী রাজ্জাকের উপার্জনে ভালোই চলছিল। হঠাৎ একদিন নারকেল গাছ থেকে পড়ে ভেঙে যায় মেরুদণ্ডের হাড়। সেই থেকে গেল ৭ বছর ধরে তার বিছানা বন্দী জীবন।

রাজ্জাক বলেন, ‘আমি বাবা হিসাবে ব্যর্থ, নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়, পরিবারের এই অবস্থা শুধু দেখি। উপরওয়ালা সাত বছর আগে আমাগো পরিবার থেকে সুখ শান্তি উঠায়ে নিছে। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে বলি আমারে একটু মাপ করে দাও। এই পৃথিবীতে পুরুষ হিসেবে বেঁচে থাকা সত্ত্বেও পরিবারের দুরবস্থা দেখতে হচ্ছে। আর সহ্য করতে পারছি না। আজ যে সংসার দেখার কথা ছিল আমার, সে সংসার দেখতাছে আমার স্ত্রী। আমার পরিবারের সব খরচ বহন করে আমার স্ত্রী, পরের বাড়ি কাজ করে। আমি সরকার থেকে সুযোগ-সুবিধা বলতে দুই বছর আগে একটি পঙ্গু ভাতার কার্ড পেয়েছি, কিন্তু বছরে চারবার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও পাই তিনবার। তা দিয়ে আমারই চলে না। আর ছেলের লেখাপড়া ও আবদার পূরণ করব কীভাবে।’

রাজ্জাকের স্ত্রী নাজমুন নাহার বলেন, ‘তার (স্বামীর) আয়েই চলতো সংসার। নারকেল গাছ থেকে পড়ে এখন আর চলাফেরা করতে পারে না। কী করব, পরের বাড়ি কাজ করে কোন রহম বাঁইচতিছি। মেয়ে দুইডারে আর পড়াতি পারিনি, বিয়ে দিছি। ছেলেডায় পড়তি চায়, কি করে পড়াব? কাজ করে যা পাই বাজার খরচ আর তার ওষুধই হয় না।’

তাদের ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিউল খান বলে, ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারি না। প্রাইভেট পড়তে পারি না। বৃষ্টি এলে ঘরে পানি পড়ে আমার সব বই খাতা সব ভিজে যায়। আব্বু তো কিছু দিতে পারে না আম্মুর কাছে যা চাই তাও পাই না। আমার সহপাঠীদের মতন চলতে পারি না। সামনে ঈদে হয়তো নতুন জামাও পাব না। পুরোনো জামা পরেই গত ঈদগুলো কেটেছে আমার। 

রাজ্জাকের ছোট ভাই মাজেদ খান বলেন, আমার ভাই আজ সাত বছর বিছানায় পড়ে আছে। সরকারের কাছে আমার ভাইডারে একটু সুস্থ হওয়ার জন্য চিকিৎসা দেওয়ার দাবি করছি। আর আমার ভাইপোটা যেন একটু সুন্দরভাবে লেখাপড়া করতে পারে এজন্য সরকার অথবা  প্রভাবশালীদের কাছে একটু সহযোগিতার অনুরোধ রইলো। 

প্রতিবেশী আবু সাইদ তরফদার বলেন, রাজ্জাক ভাই খুবই ভালো লোক। দীর্ঘ সাত আট বছর সে বিছানায় পড়ে আছে। দেখার মতো কেউ নেই। ওই ছেলেটা লেখাপড়া করে আমার ছেলের বই নিয়ে। খুব অসহায় ওরা। 

৮ নং খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কামাল তরফদার বলেন, তাকে উন্নতমানের চিকিৎসা দিলে হয়তো কিছু দিন ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারত। কিন্তু তাও আমরা দিতে পারিনি। তাকে ৩০ কেজি চালের কার্ড ও পঙ্গু ভাতা দিয়েছি, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যদি কোন সুযোগ-সুবিধা আসে তাহলে আমরা অবশ্যই তাকে দেব আর তার ছেলের লেখাপড়ার খরচের বিষয়টা আমাদের মাথায় আছে। 

আরকে