পদ্মা সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক বিশেষ ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পূরণ হলো দুই পাড়ের মানুষের আরেকটি স্বপ্ন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক এ বিশেষ ট্রেন চলাচলের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হলো। কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রেললাইন সবার জন্য উন্মুক্ত করার আশা প্রকাশ করেছে।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুর ১টা ১০ মিনিটে ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ফিতা কেটে বিশেষ ট্রেনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এরপর ১টা ১৫ মিনিটে বিশেষ ট্রেনটি চলতে শুরু করে। 

উদ্বোধনের পর বিশেষ বগিতে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে যাত্রা করেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুরে আলম লিটন চৌধুরী, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, মাদারীপুর-৩ আসনের সাংসদ আব্দুস সোবহান গোলাপ, শরীয়তপুর-১ আসনের সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু, শরীয়তপুর-৩ আসনের সাংসদ নাহিম রাজ্জাক, ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী, পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক মেজর জেনারেল একেএকম রেজাউল মজিদ, ডেপুটি সমন্বয়ক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আবুল কালাম আজাদ, প্রকল্প ব্যবস্থাপক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইদ আহমেদসহ ফরিদুপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার প্রমুখ।

এ সময় পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৪২ নম্বর পিয়ার ও পদ্মা সেতু পেরিয়ে মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর পিয়ারের কাছে আতশবাজি ফাটিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়।

পদ্মা সেতুর রেললাইন প্রকল্পের কর্মকর্তা, শ্রমিক ও স্থানীয় জনতা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ভাঙ্গা-মাওয়া রেল লিংক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইদ আহমেদ (এনডিসি, পিএসসি) বলেন, প্রকল্পটির সঙ্গে জড়িত সবাই উচ্ছ্বসিত। ট্রেনটি পরীক্ষামূলক পদ্মা সেতুর রেললাইনে চলাচল শুরু হয়েছে। আশা করি চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাত্রী সাধারণের জন্য ট্রেন উন্মুক্ত করতে পারব।

প্রকল্পের নিরাপত্তা প্রকৌশলী মো. রাসেল বলেন, আমরা ৪ বছর এখানে শ্রম দিয়েছি। ৪ বছরের পরিশ্রম আমাদের সামনে দৃশ্যমান। মন দিয়ে কাজ করেছি। কর্তৃপক্ষকে যে কমিটমেন্ট করেছিলাম তা আমরা রাখতে পেরেছি। জাতীয় এ প্রকল্পের সঙ্গে আমি নিজে জড়িত বলে আনন্দে উচ্ছ্বসিত আমিসহ প্রকল্পের সবার।

পদ্মা ব্রিজ রেল লিংক প্রকল্পের কর্মচারী সার্জেন্ট জহিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ২০১৯ সালের মে মাসে জয়েন করে পিবিডি, জমি গ্রহণসহ রেল লিংকের কাজ শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি। আজ ৪২ কিলোমিটার রেলপথ দিয়ে পরীক্ষামূলক রেল চলাচল করেছে। নিজের হাতে গড়া রেলপথ দিয়ে হাজারো মানুষ স্বপ্ন নিয়ে ট্রেনে চলবে বিষয়টি ভাবতেই আনন্দ লাগছে। 

ফরিদপুর জেলার তরুণ নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রেললাইন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে যাবে। এ অঞ্চলের মানুষ এখনও রাজধানী, চট্টগ্রামসহ অন্য অঞ্চল থেকে পিছিয়ে আছে। ভাঙ্গা থেকে ঢাকার রেলপথ ভাড়া ৫০ টাকা করার দাবি জানাই। রেলপথ সড়ক পথের তুলনায় নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত। রেলপথ শুরু হলে সড়ক পথের মতো ভয়ানক দুর্ঘটনা এড়িয়ে নিরাপদে যাতায়াতের সুবিধা ভোগ করবে এই অঞ্চলের মানুষ।

এর আগে গত বুধবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মা সেতুর রেললাইনের সর্বশেষ ৭ মিটার কংক্রিট ঢালাই সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পাথরবিহীন রেলপথ নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে। ৭ মিটার কংক্রিট ঢালাই সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে ভাঙ্গা স্টেশন থেকে মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এই ৪২ কিলোমিটার রেলপথ দিয়ে ৫টি বগি বিশিষ্ট বিশেষ ট্রেনটি চলাচল শুরু করল। এছাড়াও গত বছরের ১ নভেম্বর ভাঙ্গা স্টেশন থেকে জাজিরা প্রান্ত পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলেছিল।

সেতুর রেল লিংক প্রকল্পের অগ্রগতির প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা-যশোরের পুরো কাজের অগ্রগতি ৭৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। পদ্মা সেতুর রেললিংক প্রকল্পের অধীনে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হলো চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরইসি)।

আরকে