নিজের প্রকল্পে কাজ করছেন আবদুল হালিম

ব্যবসায় সফলতা আনতে কেঁচো থেকে পরিবেশ রক্ষাকারী জৈব সার তৈরি করে নিজের নার্সারির কাজে ব্যবহার করার পরও বাইরে কৃষকের কাছে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছেন আবদুল হালিম।

কেঁচো কম্পোস্ট একটি জৈব সার, যা জমির উর্বরতা শক্তি বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। এক মাসের বাসী গোবর খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে এবং এর সঙ্গে কেঁচোর দেহ থেকে রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে যে সার তৈরি হয়, তাকে কেঁচো কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট বলা হয়।

আবদুল হালিম মনে করেন, নার্সারি ও কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সার। সার দেওয়ার ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। ফসল হয় ভালো। সফলতা আসে সহজে। নিজের তৈরি সার দিয়ে কৃষিকাজ সম্পন্ন করা গেলে খরচ হয় কম, লাভ হয় ভালো। এতে যেকোনো ফসলে সফলতা পাওয়া যায় সহজে।

কৃষক নিজে কেঁচো থেকে পরিবেশ রক্ষাকারী জৈব সার তৈরি করে নিজের কাজে ব্যবহার করলে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না। এর গুণগত মান হয় অনেক ভালো।

আবদুল হালিম খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের মো. এরশাদ আলীর বড় ছেলে। ২০০৪ সালে লেখাপড়া থেকে চিটকে পড়ে নিজের উদ্যোগে নার্সারি শুরু করেন। আজ নিজের চলার উপার্জনের ঠিকানা করে নিয়েছেন এই ব্যবসাকে।

এপিজিক বা এন্ডিজিক নামের এক প্রজাতির কেঁচো কিনে এনে ছেড়ে দেন ট্যাংকিতে

নার্সারির কাজ শেখার জন্য মাস ছয়েক আগে বান্দরবান থেকে নার্সারির ওপর প্রশিক্ষণে গিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির ধারণা পান তিনি। সেখান থেকে এসেই এই জৈব সার তৈরির কার্যক্রম শুরু করেন।

আবদুল হালিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বান্দরবানে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে এটির ধারণা পাই। সেখান থেকে এসেই অল্প পুঁজি দিয়ে সার তৈরি শুরু করি। বর্তমানে এটির চাহিদা অনেক বেশি কৃষকের কাছে। পুঁজি কম হওয়ার কারণে বড় আকারে উৎপাদন করতে পারছি না। সরকারিভাবে কৃষিক্ষেত্রে বড় ধরনের ঋণের ব্যবস্থা থাকলে আরও বড় আকারে শুরু করতে পারতাম। এতে লাভ হতো ভালো।

নিজের নার্সারির পাশে খালি জায়গায় বিশেষভাবে তৈরি ট্যাংকি ও রিংয়ের মাধ্যমে লতাপাতা, কচুরিপানা ও জমিয়ে রাখা গোবরে এপিজিক বা এন্ডিজিক নামের এক প্রজাতির কেঁচো কিনে এনে ছেড়ে দেন ট্যাংকিতে। এগুলোর মাধ্যমে এ সার উৎপাদন করা হয়।

কম্পোস্ট তৈরির আগে মিকশ্চার করে রাখা হয়েছে

বিশেষ তৈরি ট্যাংকে ছেড়ে দেওয়া কেঁচোর ত্যাগ করা মল আর শরীর থেকে একধরনের রাসায়নিক পদার্থমিশ্রিত হয়ে উন্নত জৈব সারে পরিণত হয়, যা ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার নামেই পরিচিত। এই সার দেওয়ার ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিতে অত্যন্ত কার্যকরী হয় এবং কোনো ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না এবং এটি পরিবেশবান্ধব।

হালিম ছয় মাস আগে প্রথমে ৬০ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে চারটি ট্যাংক ও ১০টি রিংয়ে ১০ কেজি কেঁচো দিয়েই তার পদযাত্রা শুরু। বর্তমানে ১০০ কেজিরও বেশি কেঁচো আছে তার কাছে, যা দিয়ে তৈরি হয় মাসে ১ হাজার ৫০০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট সার। প্রতি মাসে একবার সার বের হয়। এরই মাঝে নিজের কাজে ব্যবহারের পর প্রায় এক টনের বেশি বাজারজাত করা সম্ভব হয়, যার আনুমানিক দাম প্রায় ২০ হাজার টাকা।

তবে ১০ কেজি কেঁচো থেকে এখন প্রায় ১০০ কেজির বেশি কেঁচো হয়েছে তার কাছে। কেঁচো বাজারজাত করা শুরু করেছেন তিনি। প্রতি কেজি কেঁচো দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

কম্পোস্ট তৈরির জন্য জমা করে রাখা গোবর

কেউ প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে বিনা মূল্যে শিখিয়ে সার্বিক সহযোগিতা দেবেন বলে জানান হালিম। তিনি বলেন, আমি ধারণা নিয়ে এসে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সফলতা পাচ্ছি। গ্রামের বেকার বসে থাকা কেউ ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ নিলে আমি সহযোগিতা করব। 

এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অরুনাংকর চাকমা ঢাকা পোস্টকে জানান, হালিম নার্সারি ও ভার্মি কম্পোস্ট তৈরিতে খুবই পারদর্শী। খুব দ্রুত তিনি ভার্মি কম্পোস্ট তৈরিতে সফলতা অর্জন করেছেন, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি খুব অল্প সময়ে এই সার উৎপাদন করে নিজের চাহিদা শেষে বাজারজাতও করছেন। এতে নার্সারির পাশাপাশি বাড়তি আয় করতে পারছেন।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগ মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্টের ব্যাপারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। ফলে দিনদিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এটি সব ধরনের ফসলে ব্যবহারযোগ্য এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বর্তমানে এটির বাজারমূল্য প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা বলে জানিয়েছেন তিনি। 

মো. জাফর সবুজ/এনএ