‘খুনের বদলা খুন চাই। জাহাঙ্গীররে ফিকলের ঘা দিয়া মাইরালাইছে। আমরাও এরার লাশ চাই’। এভাবেই বিলাপ করছিলেন হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কুশিয়ারতলা গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত জাহাঙ্গীর মিয়ার স্বজনরা।

শনিবার (৮ এপ্রিল) হত্যাকাণ্ডের পরপরই হত্যায় অভিযুক্তদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু হয়। যা সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত চলে। এর জেরে গ্রেপ্তার এড়াতে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন উভয় পক্ষের সব পুরুষ। ফলে পুরুষশূন্য ওই গ্রামের নারী ও শিশুরাই বাড়িঘর লুটপাট করার চেষ্টা করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সংঘর্ষের পর থমথমে গ্রামটির সব জায়গায় শুধু হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের চিহ্ন। পুরো গ্রামে ৫০টিরও বেশি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুরের এমন চিহ্ন দেখা যায়। এসব বাড়ির ভেতরের আসবাবপত্রসহ গৃহস্থালীর মালপত্রের কোনো অস্তিত্ব নেই। যা রয়েছে তাও ছড়ানো ছিটানো ও ভাঙা। ধানের গোলা, হাঁস-মুরগি ও গরুর খামারগুলোও শূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। কুশিয়ারতলা গ্রামের রাস্তা ও বাড়ি থেকে দুই পক্ষের নারীরা এক অপরের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করছেন। যেন গ্রামজুড়ে কেবলই সহিংসতার চিহ্ন।

নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী বলেন, ‘আমি অখন ৫ সন্তান লইয়া কীভাবে সংসার চালাইতাম। তিনডা অখনও দুধের বাইচ্চা। যেরা আমার স্বামীরে খুন করছে এরা আবার খামার ভাইঙা ৪০০ হাঁস লুট করছে। হাসটাইন থাকলেও কিছুদিন চলতাম পারতাম। আল্লায় ওই জানে সামনে আমার কফালে কিতা আছে।’

লিলবানু নামে এক নারী বলেন, খুনের ঘটনার পরপরই সাবেক ইউপি সদস্য আজমান মিয়ার লোকজন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। এই সুযোগে শনিবার থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত নিহত জাহাঙ্গীর মিয়ার পক্ষের নারী-পুরুষ মিলে প্রতিপক্ষের ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। বাড়ির মালামাল সব লুট করে নিয়ে যায়। পুলিশ একদিকে টহলে থাকলে অন্যদিকে হামলা করা হয়। যে কারণে নারীরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে গেলেও বাড়ি ও সম্পদ রক্ষার জন্য তাদের ফিরে আসতে হয়।

অপরদিকে নিহত জাহাঙ্গীরের স্বজনদের দাবি, হামলা ও ভাঙচুরের মামলা দেওয়ার জন্য আজমান মিয়ার লোকজন নিজেরাই ভাঙচুর করে মালামাল পাশের গ্রামের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে নিয়ে গেছেন। আজমান মেম্বারের লোকজন রাতের আঁধারে মুখ ঢেকে গ্রামে প্রবেশ করে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়।

তবে হত্যাকাণ্ড ও হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দুপুর ২টা পর্যন্ত কোনো পক্ষই থানায় মামলা করেনি বলে জানিয়েছেন বানিয়াচং থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অজয় চন্দ্র দেব। তবে পুলিশের অভিযানে এখন পর্যন্ত ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় অজয় চন্দ্র দেব বলেন, গ্রামটি ঘনবসতিপূর্ণ। আমরা গ্রামের একদিকে টহল দিলে অন্যদিকে হামলা চালানো হয়। যে কারণে বেশকিছু বাড়িঘর ভাঙচুর হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই থানায় আসেনি। তবে, পুলিশের টহল জোরদার করায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

আজহারুল মুরাদ/এবিএস