বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, সরকার যদি মনে করে ২০১৪ সালে ১৫৩টি আসন যেভাবে লুট করে বসেছিল, ২০১৮ সালে যেভাবে ৩০০ আসনে কারচুপি করেছে সেই রকম আরেকটি নির্বাচন হবে, তাহলে পরিষ্কার করে বলে দেই ১৭ কোটি মানুষ আপনাদের জবাব দেবে। ৭২ থেকে ৭৫ যে নির্যাতন-অত্যাচার চালিয়েছিলেন এরপরে কিন্তু ২১ বছর আপনারা ক্ষমতায় আসতে পারেননি। এই যে ১৫ বছর নির্যাতন চালাইলেন, দেশের মানুষ আপনাদের জবাব দেবে। ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবেন না, ক্ষমতার মুখ দেখতে পারবেন না। আর যদি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ আদৌ টিকে থাকে তারপরে না কথা। এবার ক্ষমতা থেকে গেলে আওয়ামী লীগের লেশমাত্র কেউ খুঁজে পাবে না।  

মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে জেলা বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।

রুমিন ফারহানা বলেন, ইভিএম নির্বাচন করবেন বলেছিলেন, কি সরে আসতে বাধ্য হইছেন? ইভিএম এখন আর হবে না। একইভাবে পরিষ্কার করে বলি আপনাদের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের সময় নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দেবেন। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করতে হবে। যতগুলো দল বা জোট-মহাজোটের যারা অংশ নেবে তাদের সকল প্রার্থী সমান সুযোগ পাবে। কোনো রকম হেনস্তা আমরা কিন্তু সহ্য করবো না।

তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একটা সময় অতিক্রম করছি যখন দেশের মানুষ ভোট দিতে পারে না, দেশের মানুষ কথা বলতে ভয় পায়। দেশের মানুষের ন্যূনতম জীবনের নিরাপত্তা নেই। খুন, গুম, নির্যাতন প্রত্যেক দিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৫ বছর ধরে এমন একটা সরকারের সময় পার করছি। মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।

নেতাকর্মীদের সুসংবাদ দিতে চান উল্লেখ করে রুমিন ফারহানা বলেন, আমি এই সরকারের পতনের আওয়াজ শুনি। এই সরকার কিন্তু খুব বেশি দিন নাই। অলরেডি এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলছেন আমেরিকা নাকি সরকার উল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে, এটা সত্য। সেই সঙ্গে এটাও সত্য আমেরিকা তাকে এমন চাপ দিয়েছে যে তিনি এখন আমেরিকার বিরুদ্ধে কথা বলেন। আমেরিকা দুই বছর আগে র‍্যাবের বিরুদ্ধে স্যাংশন দিয়েছে। সেইটা এখনো তুলতে পারেননি। বিরোধী দলের প্রতি যদি এই দমন-নিপীড়ন চলতে থাকে, বিরোধী দলের কর্মীদের পাখির মতো গুলি করে আপনার বাহিনীর লোকজন হত্যা করে, গুম করা অব্যাহত রাখে, নির্যাতন করে, তাহলে সেই দিন দূরে নয়, আবারও স্যাংশন আসতে যাচ্ছে। এবার স্যাংশন আসবে কেউ যদি নির্বাচন কারচুপি করে।

রুমিন ফারহানা বলেন, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। আমরা নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, নির্বাচন হতেও দেব না। যে নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারে না। যে নির্বাচনে মানুষের মতের প্রতিফলন হয় না, যে নির্বাচনে মানুষ তার পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে না। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্যাতন হয়, বিরোধী দলের প্রার্থীদের যদি পুলিশ পিটিয়ে রক্তাক্ত করে এই রকম আর কোনো নির্বাচন এই দেশের মাটিতে হবে না।

তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না, বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি বিশ্বাসও করে না। দেশের মানুষের প্রতি আপনারা যে অত্যাচার চালিয়েছেন, দেশের মানুষ আপনাদের তার সমুচিত জবাব দেবে। যে অন্যায় ১৫ বছরে করেছেন, তার প্রত্যেকটা অন্যায়ের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হবে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খানের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য-বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, সহ-ধর্ম সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, মহানগর আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

মোহাম্মদ মিলন/আরএআর