বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পুড়ে যাওয়া হাত নিয়ে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের প্রহর গুনছে নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের চুনিয়াগাড়ী গ্রামের শিশু জিহাদ হোসেন জীবন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১ মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর বাড়ি ফিরে এখন নিস্তেজ হয়ে বিছানায় শুয়ে রয়েছে ১২ বছর বয়সী দুরন্ত শিশুটি।

কেউ কাছে গেলেই অঝোরে কাঁদছে আর বলছে, ‘আমি আবার ভালো হয়ে বাঁচতে চাই। খেলাধুলা করতে চাই।’ পুড়ে যাওয়া হাত ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চায় শিশু জিহাদ হোসেন জীবন।

জানা যায়, চুনিয়াগাড়ী গ্রামের সাজেদুল ইসলাম ও জনি বেগম দম্পতির ছেলে জিহাদের জন্ম ২০১০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। চুনিয়াগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জিহাদকে সম্প্রতি ডেকে নেয় প্রতিবেশী মঞ্জুয়ারা বেগম। অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে তার মুরগির ফার্মের টিনের ছাউনিতে জমে থাকা কাঁঠালের পাতা নামাতে উঠিয়ে দেওয়া হয় জিহাদকে। মই বেয়ে টিনের ছাউনিতে উঠার কিছুক্ষণ পরেই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পড়ে জিহাদ। সেখানে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার বাম হাতসহ শরীরের বেশকিছু অংশ পুড়ে যায়।

পরবর্তীতে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে জিহাদকে উদ্ধার করে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাত ১১টার দিকে জিহাদকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখানে ঝলসে যাওয়া তার বাম হাত কেটে ফেলার পর এক মাস ৩ দিন ভর্তি রেখে জিহাদকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর ১০ এপ্রিল সকালে সেখান থেকে ছাড়পত্র নিয়ে জিহাদকে নওগাঁয় ফিরিয়ে আনে তার পরিবার।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আনোয়ার হোসেন, হাফিজা ও খাদিজা আক্তার জানান, উঠানে খেলাধুলা করা অবস্থায় জিহাদকে ডেকে বাড়িতে নিয়ে যান প্রতিবেশী মঞ্জুয়ারা বেগম। এর কিছুক্ষণ পরেই একটা বিকট শব্দ আসে ফার্ম থেকে। শব্দ শুনে কাছে গিয়ে দেখা যায় জিহাদ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পুড়ছে। এক সময় বৈদ্যুতিক তার থেকে সে ছিটকে পড়ে। এ সময় টিনের উপর দগ্ধ অবস্থায় থাকা জিহাদের পুরো শরীর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।

জিহাদের মা জনি বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই ফার্মের উপর দিয়ে বৈদ্যুতিক সংযোগের ত্রুটির কারণে ঝড়বৃষ্টি হলেই মাঝেমধ্যে পুরো গ্রাম বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তো। ত্রুটি ঠিক করার জন্য একাধিকবার বললেও গ্রামবাসীর কথা তোয়াক্কা করেনি মঞ্জুয়ারা বেগম। জেনে বুঝেই আমার ছেলের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক স্বচ্ছলতাও নেই। তাই ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে এখন চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি। এ সময় জিহাদের কৃত্রিম হাত স্থাপনে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মঞ্জুয়ারা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছাউনির উপর উঠে কাঁঠালের পাতা পরিষ্কার করার বিনিময়ে জিহাদকে ৫০ টাকা দিতে চেয়েছিলাম। এরপর সে সেখানে পাতা নামাতে উঠেছিল। উঠার পরই বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার শরীরে আগুন লেগে যায়। প্রতি বছর আমি নিজেই ছাউনিতে উঠে পাতা পরিষ্কার করি। সেখানে বিদ্যুতের ঝুঁকি সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলাম। আমার ভুলের কারণে জিহাদের এই ক্ষতি হয়েছে। এ সময় জিহাদকে চিকিৎসার খরচ দিয়ে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেন তিনি।

এ বিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাত হারানো শিশুটিকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কৃত্রিম হাত পাওয়ার দাবিটি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শাখায় উত্থাপন করা হবে। আশা করছি শিশুটির প্রত্যাশা পূরণ হবে।

এবিএস