ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে বুধবার (১৯ এপ্রিল) থেকে ছুটি হতে যাচ্ছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। তবে আজ থেকেই নাড়ির টানে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার মানুষ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ পার হয়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।

এদিকে ঈদে ঘরমুখী যাত্রী ও যানবাহগুলোকে নির্বিঘ্ন নৌপথ পারাপার করতে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট এবং নাজিরগঞ্জ-ধাওয়াপাড়া নৌপথের সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে জেলার বারবাড়িয়া থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ শেষের দিকে রয়েছে।

সড়ক বিভাগ বলছে, মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ শেষ হলেও আঞ্চলিক সড়কের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে ঈদে যানবাহন ও যাত্রীরা নিরাপদে সড়কপথ ব্যবহার করে ঘরে ফিরতে পারবেন।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম মানিকগঞ্জের এই দুটি নৌপথ। গত বছর থেকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের হার কমেছে। তবে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে তেমন প্রভাব পড়েনি।

এদিকে ঢাকার আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই, গাজীপুর, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, টঙ্গীসহ আশপাশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা এ দুটি নৌপথ দিয়ে এখনো চলাচল করেন। ঈদের সময় এ দুটি নৌপথে বাড়তি যাত্রী ও যানবাহনের চাপ থাকার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘাট সংশ্লিষ্টরা। বিআইডব্লিউটিসির দাবি, পর্যাপ্ত ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা থাকায় ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি হবে না। এছাড়া এ দুটি নৌপথে যাত্রী পারাপারে ৩৩টি লঞ্চ চলাচল করবে। এরমধ্যে পাটুরিয়ায় ২০টি আর আরিচায় ১৩টি লঞ্চ চলাচল করবে বলে জানিয়েছে লঞ্চঘাট কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও ঘাট কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, বারবাড়িয়া থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ১৭টি স্পটে সড়ক বিভাগের উন্নয়নকাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ কয়েকটি সড়কের কাজ এখনও চলমান রয়েছে।

মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড গোলড়া, বানিয়াজুড়ি, পুখুরিয়া, মহাদেবপুর, বরংগাইলসহ বেশিরভাগ বাসস্টপেজ এলাকায় এসব উন্নয়নকাজ শেষ। ফলে মহাসড়কে ভোগান্তিতে পড়বে না ঘরমুখী মানুষ। এদিকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকার ৫টি ফেরিঘাট ও দৌলতদিয়া ৩টি ফেরিঘাট প্রস্তুত করা হয়েছে। দুটি নৌপথেই প্রস্তুত করা হয়েছে লঞ্চ।

পাটুরিয়া লঞ্চঘাটের ব্যবস্থাপক পান্না লাল নন্দী জানান, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর থেকে এ দুটি নৌপথে যাত্রী পারাপারের হার কমে গেছে। ঈদকে সামনে রেখে দুটি নৌপথে ৩৩টি লঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। পর্যাপ্ত লঞ্চ থাকায় যাত্রী পারাপারে তেমন কোনো ভোগান্তি হবে না।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা ঘাটের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ জানান, গত দুই বছর ধরে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথ চালু হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলেও এ নৌপথে তেমন প্রভাব পড়েনি। আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ৬টি ফেরি রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে আরও একটি ফেরি বহরে যুক্ত করা হবে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের বাণিজ্য শাখার উপমহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ১৮টি ফেরি রয়েছে। যাত্রী ও যানবাহনের হার কম থাকায় বেশিরভাগ ফেরি বসিয়ে রাখতে হয়। ঈদকে সামনে রেখে আরও ২টি ফেরি বহরে যোগ দেবে। ইতোমধ্যে মাওয়া থেকে খান জাহান আলী নামের ফেরিটি পাটুরিয়া ফেরিঘাটের উদ্দেশ্য রওনা হয়েছে। ঈদে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে এ নৌপথে ২০টি ফেরি চলাচল করবে বলে তিনি জানান।

মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিশ্চিত করতে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় সড়কের মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। মহাসড়কে বাকি অংশের উন্নয়ন কাজও শেষ। তবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে উন্নয়নকাজের কারণে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি হবে না।

সোহেল হোসেন/এমজেইউ