ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে ছাত্রলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ
ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই রাজবাড়ী সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বরাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ সুমন সবুজকে (২৮) হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার।
রোববার (২৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন সবুজ। নিহত সবুজ একই এলাকার শামসুল আলম বাবুর ছেলে। তিনি বরাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদের ভাতিজা। এ ঘটনায় আহত হন আরও দুইজন। আহতরা হলেন একই এলাকার সজীব হোসেন ও মহায় মমীন।
বিজ্ঞাপন
সবুজের চাচাতো ভাই সজিব শেখ বলেন, সবুজ ও তার কয়েক বন্ধু মিলে উড়াকান্দা পদ্মা নদীর পাড়ে গল্পগৃহ রিসোর্টে বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য বৈদ্যুতিক নৌকা, জাম্পিং স্লিপারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই প্রতিপক্ষ আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।
প্রত্যক্ষদর্শী জুয়েল শেখ বলেন, উড়াকান্দার গল্পগৃহ রিসোর্টে আমরা ৫ বন্ধু মিলে বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রাইড নিয়ে আসি। ঈদ উপলক্ষ্যে রাইডগুলোতে চাপ থাকায় গতকাল আমরা হিসাব নিকাশে বসি। সারাদিন আমরা রিসোর্টেই ছিলাম। পরে রাত সাড়ে ৯টার পর সবুজসহ মোট ৯ জন সবুজের বাড়িতে গিয়ে ঘরের মধ্যে বসে রিসোর্টের রাইডের টাকার আয়ের হিসেব করছিল। আমি সবার শেষে রাত ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে যাই। আমি ঘরে ঢোকার পরপরই বাইরে থেকে মানুষের আসা যাওয়ার শব্দ পাই। হঠাৎ সবুজের বাড়ির সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
বিজ্ঞাপন
এরপর রুমের বাইরে থেকে জানালা দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে সবুজের কপালে এবং ঘরের মধ্যে থাকা সজিব নামে এক যুবকের পেটে ও পায়ে গুলি লাগে। এ সময় ঘরের মধ্যে থাকা অন্যরা দরজা খুলে দৌড়ে বাইরে চলে এলে দুর্বৃত্তরা চলে যায়। তাৎক্ষণিক সবুজ ও সজিবকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই সবুজ মারা যায়।
নিহত সবুজের মা সুজলা বেগম বলেন, ‘ওরা আমার সন্তানটারে কাইরা নিলো। আমার সবুজরে ওরা মাইরে ফেলাইলো। কি দোষ করছিল আমার সবুজ। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।’
নিহত সবুজ শেখের স্ত্রী সুফিয়া বলেন, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কারণে আমার স্বামীর অনেক শত্রু ছিল। পূর্ব শত্রুতার জেরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।
রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। সবুজ ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত নেতা ছিলেন। তার মৃত্যর কারণ উদঘাটন করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানাই।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান বলেন, ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন ও এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
মীর সামসুজ্জামান/এবিএস