মেশিনে ভাঙা হচ্ছে পাথর

করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির প্রচেষ্টায় এবারও অর্জিত হয়েছে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। এ নিয়ে টানা তিন বছর ধরে লাভের মুখ দেখছে খনিটি। তবে খনি-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে হারে পাথর উত্তোলন হচ্ছে, তাতে প্রতিষ্ঠানটি আর লোকসানে না যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাদের দাবি, করোনা প্রাদুর্ভাব অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি।

• গত কয়েক বছর আগে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লোকসানে ছিল প্রতিষ্ঠানটি
• গড়ে প্রতিদিন ৫ হাজার টন পাথর উত্তোলিত হয়

পাথরখনির প্রধান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। পরে ওই বছরের আগস্ট মাস থেকে আবারও পাথর উত্তোলন শুরু হয়। বন্ধের পর থেকে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খনি থেকে পাথর উত্তোলিত হয়েছে ৬ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন, যা প্রতিদিনের উৎপাদন পাঁচ হাজার টনের অধিক।

খনি সূত্রে জানা যায়, দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল মধ্যপাড়া পাথর খনিটি ২০০৭ সালে পাথর উৎপাদন শুরু হয়। সেই সময়ের খনিটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নামনাম কোম্পানির মাধ্যমে পাথর উত্তোলন শুরু করে। কোম্পানিটি চাহিদা অনুযায়ী পাথর উত্তোলন করতে না পারায় কয়েক বছরের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ওপরে লোকসানে যায় প্রতিষ্ঠানটি।

এতে উৎপাদন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল ও সম্ভাবনাময় মধ্যপাড়া পাথর খনিটি। এরপর খনিটির বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেলারুশভিত্তিক জার্মানিয়া ট্রাস্ট কনসোর্টিয়াম জিটিসি ২০২১ সালে খনিটির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয়। পরে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ৭৫০ শ্রমিক দিন-রাত তিন শিফট ভাগ হয়ে পাথর উত্তোলন শুরু করেন। তিন বছর থেকে প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখতে শুরু করে।

বিশ্বে মাটির উপরিভাগ থেকে পাথর আহরণ করা হলেও, বিশ্বজুড়ে একমাত্র মাধ্যপাড়া পাথর খনি, এখানে ভূগর্ভের তলদেশ থেকে আগ্নেয়গিরি শীলা উৎপাদন করা হয়। শীলা অন্য যেকোনো শীলা থেকে অনেক শক্তিশালী ও উন্নত। এ কারণে দেশের চলমান মেগা প্রকল্পে মধ্যপাড়ার শীলা ব্যবহার করার আহ্বান জানান তালহা ফরাজি। খনিতে দেশি-বিদেশি ২০০ কর্মকর্তা ও ৭৫০ শ্রমিক দিন-রাত তিন ভাগে কাজ করছেন।

প্রতিদিন পাথর বহন ও ক্রেতাদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে খনি এলাকা। খনিকেন্দ্রিক আশপাশে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকান। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক পাথর নেওয়ার জন্য খনিতে আসে। সেখানে পাথর লোড-আনলোড করার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন কয়েক শ শ্রমিক, এতে সেখানকার অর্থনীতি ও জীবন-জীবিকার মান উন্নত হচ্ছে দিন দিন।

খনির মহাব্যবস্থাপক আবু তালহা ফরাজি বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ ছিল। গত আগস্ট মাস থেকে আবারও পাথর উত্তোলন শুরু হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজার টনের বেশি পাথর উত্তোলন করছে।

তিনি আরও বলেন, শুরুর দিকে উৎপাদনের কিছুটা ঘাটতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১০০ কোটি টাকা লোকসানে পড়ে। তবে সব বাধা ও প্রতিকূলতা কাটিয়ে তিন বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখছে।

এনএ