সাতক্ষীরায় রাসায়নিক কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করার সময় ৫৬ হাজার ৮৪০ কেজি আম জব্দ করে নষ্ট করা হয়েছে। গত ১২ দিনে জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অভিযানে এই অপরিপক্ক আমগুলো ধ্বংস করা হয়।

চলতি মাসের ১৬ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে নিরাপদ আম সংশ্লিষ্ট এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় জেলা প্রশাসক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের মতামতের ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতের আম বাজারজাতকরণের নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১২ মে থেকে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই ও গোপালখাসসহ অন্যান্য স্থানীয় আম পাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ২৫ মে থেকে হিমসাগর, ১ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন থেকে আম্রপালি পাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

জানা যায়, অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় অপরিপক্ক আম রাসায়নিক কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপের অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম জব্দ করে নষ্ট করা হচ্ছে এ বিষয়ে প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। এই নিয়ে গত ১২ দিনে ৫৬ হাজার ৮৪০ কেজি আম জব্দ করে নষ্ট করেছে প্রশাসন কৃষি বিভাগ।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় অপরিপক্ক আম রাসায়নিক কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর চেষ্টা করছে। চলতি মাসের ১৬ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১২ দিনে রাসায়নিক কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো ৫৬ হাজার ৮৪০ কেজি আম বাজারদাত করার সময় নষ্ট করা হয়। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৪০ কেজি, কালিগঞ্জ উপজেলায় ১০ হাজার কেজি, কলারোয়া উপজেলায় ১ হাজার কেজি, দেবাহাটা উপজেলায় ২৮ হাজার কেজি, আশাশুনি উপজেলায় ২ হাজার কেজি ও শ্যামনগর উপজেলায় ২ হাজার কেজি রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম নষ্ট করা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

এদিকে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে চলতি মৌসুমে ২২৫ কোটি টাকা আম বেচা বিক্রি হবে। কোনো প্রকার বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন না হলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

সাতক্ষীরার আমের খ্যাতি রয়েছে ইউরোপ পর্যন্ত প্রতিবছরের ন্যায় চলতি মৌসুমেও সাতক্ষীরা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আম রপ্তানি করা হবে ইউরোপ।নবমবারের মত চলতি বছরে ইতালি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, জার্মানি ও ইংল্যান্ডে রপ্তানি হবে সাতক্ষীরার আম। 

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলার চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। যেখানে  উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়লে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হবে সাতক্ষীরা থেকে। এতে সবমিলিয়ে বেচা বিক্রি হবে প্রায় ২২৫ কোটি টাকা। গতবছর আশানুরূপ দাম ও উপযুক্ত আবহাওয়া না থাকায় আম চাষিরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তবে চলতি মৌসুমে গতবারের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশাবাদী আম চাষিরা। তবে প্রচণ্ড তাপদহ আমের উপর প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর সদর উপজেলায় এক হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৫ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৭০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮৩৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরের ১৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। সবমিলে চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত পাঁচ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার ১০০ চাষি রয়েছেন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। যে ফলন হয়েছে, তাতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে রাসায়নিক দিয়ে পাকানো অপরিপক্ক আম অভিযান চালিয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে। এ অভিযান চলমান রয়েছে। সাধারণত অসাধু ব্যবসায়ীরা অপরিপক্ক আম রাসায়নিক কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

তিনি জানান, চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। যেহেতু গত কয়েক বছরের তুলনায় আমের ফলন ভালো হয়েছে সে ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আম উৎপাদন হবে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত পাঁচ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার ১০০ চাষি রয়েছেন। ৫০ টাকা কেজি দরে দাম ধরলে ২২৫ কোটি টাকার আম বিক্রি হবে।

সোহাগ হোসেন/আরকে