পটুয়াখালীর দশমিনায় তেঁতুলিয়া নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় বাবাসহ বেঁচে ফিরেছে দেড় বছর বয়সী রাতুল। শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার রনগোপালদী ইউনিয়নের আউলিয়াপুর লঞ্চঘাট সংলগ্ন তেঁতুলিয়া নদীতে ট্রলারডুবিতে ভেসে যাওয়া ১৪ যাত্রীর মধ্যে ছিলেন বরের বাবা মনিরুল হাওলাদার ও ছোট ভাই রাতুলও। মনিরুল এক সময় ক্লান্ত হয়ে সন্তানকে মাঝ নদীতে ছেড়ে দিলেও বাবার দাড়ি ও জামা আঁকড়ে ধরে বেঁচে ফিরেছে সে।

রনগোপালদী ইউনিয়নের মধ্যগুলি আউলিয়াপুর এলাকার বাসিন্দা মনিরুল হাওলাদার। পেশায় জেলে হওয়ায় শুক্রবার বড় ছেলে রাব্বি হাওলাদারের বরযাত্রী হিসেবে নিজের মাছ ধরার ট্রলারে করে চর শাহজালাল থেকে ফিরছিলেন তিনি। হঠাৎ মাঝ নদীতে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় ঝড়ে নৌকায় থাকা ১৪ জন বরযাত্রীসহ ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা ১৪ যাত্রীর মধ্যে ৯ জন উদ্ধার হলেও তখন একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে আজ রোববার (৩০ এপ্রিল) বর রাব্বি, তার মা সেলিনা আক্তার ও এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।  

গতকাল শনিবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে মনিরুলের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো ভাঙাচোরা একটি বাড়িতে বসবাস করেন মনিরুল। তার স্ত্রী ও বড় ছেলেকে হারিয়ে তার পুরো বাড়িতে এখন শোকের মাতম বইছে। কিন্তু সেই ট্রলারডুবিতে বেঁচে গেছেন তিনি ও তার ছোট ছেলে। সবাই চুপচাপ বসে মনিরুল হাওলাদার ও তার সন্তানকে দেখছে। বাবার কোলে দেড় বছর বয়সী শিশু রাতুল বসে আছে আর আগত মানুষদের ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে দেখছে।

এ সময় মনিরুল হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, চর শাহজালাল থেকে জুমার নামাজের পর আমরা রওনা দেই। আমরা ছোট নদী পার হয়ে বড় নদীর মাঝখানে পৌঁছানোর পর হঠাৎ ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে বৃষ্টি পড়ছিল ও অনেক বাতাস বইছিল। নৌকাটা চারদিকে ঘুরছিল এমন সময় নদীর তুফানে ট্রলারের দুই পাশ দিয়ে পানি উঠতে থাকে। আস্তে আস্তে ট্রলারটিতে পানি ভরে যায়।

তিনি আরও বলেন, আমি চারদিকে তাকিয়ে দেখতে থাকি নদীর অনেক দূরে একটি মাছ ধরার ট্রলার দেখা যায়। আমরা সবাই তখন চিৎকার করে সাহায্যের জন্য ডাকতে থাকি কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনতে পারে না। তখনও ট্রলারটি পুরোপুরি ডোবেনি। একপর্যায়ে ট্রলারটি ডুবে গেলে আমরা ভেসে উঠি। একেক জন একেক দিকে ভেসে যায়। অনেকক্ষণ সাঁতার কাঁটার পর আমি ক্লান্ত হয়ে যাই। দেখি আমার স্ত্রী রাতুলকে টেনে তুলে দিয়ে বলে ‘বাচ্চাটাকে বাঁচাও’। আমি বাম হাত দিয়ে রাতুলের হাত ধরি। একটু পর দেখি আমার স্ত্রী পাশে নেই। সাঁতরাতে সাঁতরাতে ক্লান্ত হয়ে গেলে এক সময় আমি বাচ্চার হাত ছেড়ে দেই। দুই হাত দিয়ে সাঁতার কাটতে থাকি।  

মনিরুল বলেন, এরপর আমার ট্রলারের ছাউনি দেখতে পাই, সাঁতার কেটে ছাউনির কাছে গিয়ে দু তিনটে তক্তা এক সঙ্গে করে আমি যখন বাঁচার জন্য তক্তার উপরে উঠি তখন দেখি রাতুল এক হাত দিয়ে আমার শার্ট আর দাড়ি আঁকড়ে ধরে আছে। কিছুক্ষণ পর একটা নৌকা এসে আমারে ও আমার বাচ্চারে উদ্ধার করে। 

রোববার পটুয়াখালী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আহম্মেদ জানান, পটুয়াখালীর ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের সঙ্গে বরিশাল থেকে আসা ডুবুরি দলের সদস্যরাও কাজ করছে। আজ সকালে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপরে বেলা ১২টার দিকে সময় আরও একজন শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো একজন নিখোঁজ রয়েছেন। 

মাহমুদ হাসান রায়হান/আরকে