দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২৬ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এদিন নিরাপত্তার কারণে সকাল ১০টা থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল সীমিত ছিল। 

ওইদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে সড়কে গাড়ি চলাচল সীমিত করায় অসুস্থ এক নবজাতককে হাসপাতালে না নিতে পারায় মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ এনে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন ইসমাইল নামে এক যুবক। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে তারেক/গণঅধিকার পরিষদ’ ও ‘ফেস দ্যা পিপল’ নামে দুটি ফেসবুক পেজ থেকে নানান সমালোচনা করা হয়েছে।

ইসমাইল সদর উপজেলার মেরী গোপনাথপুর গ্রামের আকরামুজ্জামান মোল্লার ছেলে। তিনি সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক।

রাষ্ট্রপতিকে ঘিরে মিথ্যাচারের ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরদিন ২৭ এপ্রিল রাতে গোপালগঞ্জ থানা পুলিশ ইসমাইলকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।

এ নিয়ে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, বিষয়টি পুরোপুরি গুজব ছিল। রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষ্যে নিরাপত্তার জন্য যান চলাচল সীমিত করার কারণে ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়নি। শিশুটির মৃত্যু হয়েছিল হাসপাতালেই। স্বজনরা মরদেহ নিয়ে ইজিবাইকে করে বাড়ি ফিরছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবজাতকের বাবার নাম তরিকুল শেখ। তিনি কাশিয়ানি উপজেলার সাজাইল ইউনিয়নের বাঘঝাপা গ্রামের ইসমাইল শেখের ছেলে। গত ২৫ এপ্রিল তার একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। জন্মগ্রহণের পর থেকে নবজাতকের শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের স্পেশাল কেয়ার নিউ ব্রন ইউনিটে (স্ক্যানো) ভর্তি  করা হয়। ২৬ এপ্রিল সকালে হাসপাতালে ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়। ওই দিন সকালে হাসপাতাল থেকে নবজাতকের মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি কাশিয়ানির বাঘঝাপা গ্রামের উদ্দেশ্যে ইজিবাইকে রওনা হন নবজাতকের বাবা, মা ও নানি। পথিমধ্যে সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া পৌঁছালে তাদের গাড়ি গতিরোধ করে কর্তব্যরত পুলিশ। এসময় নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়টি পুলিশকে বললে পুলিশ তাদের বহনকৃত ইজিবাইকটি ছেড়ে বাইপাস সড়ক দিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার সময় তাদের গাড়ি আটকানোর কারণে ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়নি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নবজাতকের বাবা তরিকুল শেখ ও গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক অসিত কুমার মল্লিকসহ ওই হাসপাতালের স্পেশাল কেয়ার নিউ ব্রন ইউনিটের কর্তব্যরত নার্স সিমা রানী মন্ডল।

এ বিষয়ে জানতে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গেলে স্পেশাল কেয়ার নিউ ব্রন ইউনিটের (স্ক্যানো) কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স সীমা রানী মন্ডল বলেন, গত ২৫ এপ্রিল রাতে ওই নবজাতক শিশুকে ভর্তি করা হয়। আমি তাকে দেখভাল করছিলাম। ওই শিশুটির পূর্ণ বয়সে ভূমিষ্ঠ না হওয়ায় তার ওজন কম ছিল। ১ কেজি ৬০০ গ্রাম এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। ২৬ এপ্রিল সকালে স্ক্যানো ওয়ার্ডেই ওই শিশুর মৃত্যু হয়। ওইদিন সকাল ১০টায় পরিবারের লোকের কাছে শিশুটির মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তারা হাসপাতাল ত্যাগ করে।

এ বিষয়ে ওই নবজাতকের বাবা তরিকুল শেখ বলেন, আমার নবজাতক শিশুকে ২৫ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে গোপালগঞ্জ ২৫০ বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। ওই রাতেই হাসপাতালে স্ক্যানো ইউনিটে ভর্তি করে। পরদিন অর্থাৎ ২৬ এপ্রিল সকাল নয়টার দিকে হাসপাতালের স্ক্যানো বিভাগে আমার নবজাতক ছেলে সন্তানের মৃত্যু হয়। ওইদিন ১০টায় নবজাতক ছেলের মৃতদেহ ইজিবাইকে করে কাশিয়ানি উপজেলার সাজাইল ইউনিয়নের বাঘঝাপা গ্রামে ফিরছিলাম। ইজিবাইক নিয়ে আমরা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া পৌঁছালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তার কারণে আমাদের  ইজিবাইক গতিরোধ করা হয়। পরে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশকে আমি ঘটনাটা বললে তারা আমাকে পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে বলে। ওই সময়ে একজন যুবক তার মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিল এবং আমাদের ইজিবাইকের ভিডিও ধারণ করে তখন জিজ্ঞেস করে আমার ছেলে মারা গেছে কিনা তখন আমার শাশুড়ি ও স্ত্রী বলে হ্যাঁ আমার ছেলে মারা গেছে। তখন আমি ইজিবাইকে ছিলাম না। ইজিবাইক থেকে নেমে দেখি চন্দ্রদিঘলিয়া স্ট্যান্ডে কয়েকজন লোকের সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। এরপর ওই যুবক তার মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করা শুরু করে। এরপর আমরা ইজিবাইক নিয়ে চলে আসি।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মো. খাইরুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি আগমন উপলক্ষে পুলিশ সদস্যদের বাধার মুখে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে এক যুবক। ওই যুবকের কোনো উদ্দেশ্য আছে কীনা, কেন এই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য ফেসবুকে প্রচার করেছে আমরা সেটা খতিয়ে দেখছি। আপাতত তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

আশিক জামান/এমএএস